রামগঞ্জে ফসলি জমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটায় ফসল উৎপাদনে ধস নামার আশঙ্কা - pratidinkhobor24.com

Breaking

Home Top Ad

Post Top Ad




Wednesday 29 January 2020

রামগঞ্জে ফসলি জমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটায় ফসল উৎপাদনে ধস নামার আশঙ্কা



রামগঞ্জ (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধিঃ কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বিভিন্ন সময়ে সরকার নানা উদ্যোগ গ্রহন করলেও স্থানীয় প্রশাসনের তদারকির অভাবে আইন অমান্য করে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে কৃষি জমির উপরিভাগের মাটি কেটে ইটভাটায় ইট তৈরি করা হচ্ছে। এ উপজেলায় ২৩টি ইটভাটায় কৃষি জমির মাটি সরবরাহ করা হচ্ছে।


ইটভাটায় মাটি সরবরাহের জন্য একশ্রেণির দালাল চক্র গ্রামে গ্রামে ঘুরে কৃষকদের মাটি বিক্রি করতে উৎসাহ জোগায় এবং স্বল্পমূল্যে জমির উপরিভাগের দেড় থেকে দুই ফুট গভীর করে এসব মাটি কেটে কিনে নেয়। দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কথা না জেনে সহজ-সরল কৃষকেরা নগদ লাভের আশায় জমির মাটি বিক্রি করেন। দিন দিন ফসলি জমির মাটি কাটার এই প্রবণতা বেড়েই চলছে। ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি ফসলি জমির উর্বরা শক্তিও আশঙ্কাজনক ভাবে হ্রাস পাচ্ছে। এ ছাড়াও ফসলি জমির উপরিভাগ কেটে নেওয়ার ফলে ফসলের প্রধান খাদ্য নাইট্রোজেন, পটাশ, জিংক, ফসফরাস, সালফার, ক্যালসিয়ামসহ অর্গানিক বা জৈব্য উৎপাদনের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। 
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩-এর ৫(১) ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি ইট তৈরি করার উদ্দেশ্যে কৃষি জমি বা পাহাড় বা টিলা থেকে মাটি কেটে বা সংগ্রহ করে ইটের কাঁচামাল হিসেবে তা ব্যবহার করতে পারবেন না। 


সরেজমিনে উপজেলার কাঞ্চনপুর, নোয়াগাঁও,ভাদুর,ইছাপুর, চন্ডীপুর, লামচর,দরবেশপুর,করপাড়া,ভোলাকোট,ভাটরা ইউনিয়নে ঘুরে দেখা গেছে, আবাদি জমির ওপরের অংশ দেড় ফুট থেকে দুই ফুট গর্ত করে কাটা। এসব মাটি ট্রাক্টর ও ট্রলি বোঝাই করে ইটভাটায় নেওয়া হচ্ছে।
উপজেলা কৃষিবিদদের মতে, মাটির উপরিভাগের ৫-১০ ইঞ্চির মধ্যে উর্বরতা শক্তি থাকে। তাই এসব মাটি খুঁড়ে বিক্রি করার ফলে তা পুনরায় ফিরে আসতে লক্ষ বছর সময় লাগে। আর বারবার তা খোঁড়া হলে এসব জমি ফসল উৎপাদনে স্থায়ীভাবে একেবারে অক্ষম হয়ে পড়তে পারে।
একজন ভাটামালিক বলেন, এক ট্রলি মাটিতে ৯০০ থেকে ৯৫০টি ইট তৈরি হয়। একটি ইটভাটায় প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ ট্রলি মাটির প্রয়োজন। সে হিসেবে ২৩টি ইটভাটায় প্রতিদিন গড়ে ৮০০ থেকে ৯০০ ট্রলি মাটির প্রয়োজন হয়। 
একটি ইটভাটার মালিক কালু মাঝি বলেন, কৃষকরা মাটি না বেচলে জোর করে মাটি নিতে পারতাম না। তাদের লাভ হয় বিধায় তারা বিক্রি করছেন।
কৃষক আবদুল মতিন বলেন, ‘অভাবের কারণে আমি এক বিঘা জমির মাটি ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছি। তারা  জমির উপরিভাগ থেকে দুই ফুট গভীর করে মাটি কেটে নিয়েছে।
আরেকজন কৃষক আবদুর রহিম জানান, তাঁর এক একর জমির উপরিভাগের দুই ফুট মাটি ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন তিনি।
দীর্ঘদিন ধরে মাটি বেচাকেনার সঙ্গে জড়িত মো. দেলোয়ার জানান, ইটভাটায় ইট তৈরির জন্য প্রচুর মাটির প্রয়োজন। এ জন্য বর্তমানে মাটির চাহিদা বেড়ে গেছে। এ ছাড়া নতুন নতুন ঘরবাড়ি উঠছে। এই ঘরবাড়ী তৈরিতে মানুষ ভিটি করার জন্য মাটি ব্যবহার করছে। মাটির প্রয়োজন বেড়ে যাওয়ায় কয়েক বছর ধরে এ উপজেলায়  এই ব্যবসা জমজমাট হয়ে উঠছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৈয়দ রায়হানুল হায়দার বলেন, ‘জমির উর্বরতা শক্তি উপরিভাগ থেকে ৫-১০ ইঞ্চির মধ্যে থাকে। তাই ওপর থেকে মাটি সরিয়ে ফেলায় উর্বরতা শক্তি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। দীর্ঘ সময় সেই জমির ওপর বিভিন্ন পদার্থ জমে উর্বরতা শক্তি ফিরে আসতে শুরু করে। এভাবে আগের মতো উর্বরতা শক্তি ফিরে আসতে লক্ষ বছর সময় লাগে। মাটি বিক্রি করে সাময়িক অভাব দূর হলেও ক্ষতি হয় অনেক বেশি। 
ইউএনও মুনতাসির জাহান বলেন, আইন অনুযায়ী ইটভাটায় ফসলি জমির মাটি ব্যবহার করা যায় না। এ বিষয়ে সরেজমিনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

No comments:

Post a Comment

Post Bottom Ad

Pages