লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধিঃ লক্ষ্মীপুরের রামগতির চররমিজ ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডে জমির মালিকানার সঠিকতা না থাকলেও সহোদর ভাই ছানা উল্যার ছেলেদের ছাবকবলা দলিলের সাড়ে ৫শতাংশ জমি জোরপূর্বক দখল ঘর করতে নির্মাণ সামগ্রী এনে স্তুপ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে আবদুল গোফরানের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ আছে তার মালিকানার চেয়েও ২৯শতক বাড়তি জমি সহোদর ভাই ছানা উল্যার জমি থেকে বিক্রি করে। আজও তাকে জমি ফেরত দেয়নি।
এছাড়া তার ওয়ারিশী ২৪শতক জমি নিজের স্ত্রী ও ছেলেদের নামে রেকর্ড করে অপর ওয়ারিশ অর্থাৎ ভাই-বোনদের সাথে যৌথ খতিয়ানে নিজের নাম বসিয়ে সেখানেও জমি দাবী করার অভিযোগ রয়েছে।
তাছাড়া একাধিক বৈঠকে লিখিত শালিশনামায় তার মালিকানা না থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হলেও দখল ছাড়ছেনা সানা উল্যার ছেলেদের সাড়ে ৫শতাংশ ও ফেরত দিচ্ছেনা ছানাউল্যার ২৯শতক জমি। এ নিয়ে যে কোন মূহুর্তে দু'পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের আশংকা রয়েছে।
রবিবার (২২নভেম্বর) দালিলিক কাগজপত্র ও অনুসন্ধানকালে জানাযায়, লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরমেহার গ্রামের মৃত সায়েদুল হকের চার ছেলে ও তিন কন্যার মধ্যে দুই সহোদর ভাই গোফরান ও ছানা উল্যার মধ্যে কয়েক যুগ থেকে জমি নিয়ে বিরোধ লেগে আছে। এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিরা বহুদফে এ বিরোধ মিমাংসার চেষ্টা করলেও গোফরান মিমাংসা না মানায় বার বার বৈঠক ব্যর্থ হচ্ছে। ১৯৯৬ সালে দুই ভাইয়ের সম্মতিতে বিরোধ মিমাংসা কল্পে শালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উভয়ের জমি পরিমাপ ও মালিকানার সমুদয় দলিল পর্যালোচনা শেষে শালিশী সিদ্ধান্ত গোফরান ও সানাউল্যা মেনে নিয়ে দুইজনের যৌথ স্বাক্ষরে একটি শালিশী রোয়েদাদ সম্পাদন করা হয়।
শালিশনামার বিবরনে জানা যায়, চরমেহার মৌজার ৭১, ১০১, ১৫৬, ১৫৭, ১৭৭, ১৭৯, ১৮২, ১৮৮ ও ২২৩ খতিয়ানের বিভিন্ন দাগে গোফরান ও সানাউল্যা ওয়ারিশ ও অপর ভাই-বোন সহ বিভিন্ন ব্যাক্তির কাছ খরিদ সূত্রে সম্পত্তির মালিক দখলকার হয়। গোফরানের সম্পত্তি পর্যালোচনা জানা যায়, তিনি ওয়ারিশ সূত্রে ৮৩.৭৫শতাংশ খরিদ ১৮শতাংশ সহ ১০১.৭৩শতাংশের মালিক হলেও এর মধ্যে বোন একলিমা বিক্রিবাদ দেড় শতাংশের মালিক থাকাবস্থায় তার কাছ থেকে ৪শতাংশ জমি খরিদ করেছে গোফরান। এতে তার মালিকানা রয়েছে ৯৭.৭৫ শতাংশ। উক্ত মালিকানা থেকে তিনি ১০৩.৩৩ শতক বিক্রি করে। এতে তিনি মালিকানা ছাড়া ৬.৩৩শতক বাড়তি বিক্রি করে।
তার প্রতারণা এখানেই শেষ নয়। তিনি জমি বিক্রিকালে দলিলে ১৭৭খতিয়ানের বাড়ী-বাগানের ৩১১৩ দাগ বাদ রেখে নাল জমির অন্যান্য খতিয়ান ও দাগ নম্বর দিয়ে জমি বিক্রি করায় তার মালিকানা শেষে সানা উল্যার ২৯ শতক জমি তিনি বাড়তি বিক্রি করেন। নালে তার কোন জমি না থাকায় শালিশী বৈঠকে সানাউল্যাকে ২৯ শতক জমি বাড়ীর জমি থেকে ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলে তা মেনে নিয়ে তিনি চলচাতুরীর আশ্রয় নিয়ে রেকর্ড অফিসের সাথে কারসাজি করে ১৭৭খতিয়ানের ৩১১৩ দাগের বাড়ী-বাগানের ২৪শতক জমি তার স্ত্রী ও দুই ছেলের নামে রেকর্ড করে নেয়। অদ্যাবধি তার ভাইকে জমি ফেরত দেয়নি।
এছাড়াও গোফরান স্ত্রী সন্তানদের নামে জমি রেকর্ড করে দিয়ে কৌশলে অপর ভাই-বোনদের ওয়ারিশী অংশের সাথে তার নাম দিয়ে রেকর্ড করে বাড়তি জমি দাবী করে।
অপর দিকে সানাউল্যার ছেলে জিল্লুর রহমান জানান, আমি ও আমার ভাই জুয়েল ও শাহাদাতের যৌথ দলিলে কামাল উদ্দিনের নিকট হতে ছাফকবলা ৪৩৩১নং দলিলের সাড়ে ৫শতাংশ জমি খরিদ করি। আমাদের উক্ত খরিদীয় জমি জোরপূর্বক দখল করে আছে গোফরান গংরা। ইতোমধ্যে ওই জমিতে ঘর তৈরীর জন্য নির্মান সামগ্রী এনে স্তুপ করে রেখেছে তারা।
জামাল উদ্দিন জানান, গোফরান গংরা ছানা উল্যার মালিকানা জমি বুঝে দিচ্ছেনা এবং জিল্লুর গংদের সাড়ে ৫শতক জমি জোরপূর্বক দখল করে রেখেছে। স্থানীয় সিদ্ধান্ত মানছেনা তারা
এ সম্পত্তি নিয়ে আমার ভাই কামাল উদ্দিনকে গোফরানগংরা কুপিয়ে জখম করলে কামাল উদ্দিনের দায়েরকৃত জিআর মামলা গোফরান ও তার ছেলেদের দুই বছর সাজা হয়েছে বলে তিনি জানান।
ভুক্তভোগী ছানা উল্যা জানান, গোফরান রামগতির আলেকজান্ডার রেকর্ড অফিসের দালালি করার সুবাদে নিজের স্ত্রী সন্তানদের নামে ওয়ারিশী জমি রেকর্ড করে আমাদের খতিয়ানে তার মালিকানা দাবী করে এ নিয়ে তিনি বাদী হয়ে আমাকেসহ আবদুল মালেকগংদের বিবাদী করে দেওয়ানী মোকদ্দমা নং ১৬/২০১০ইং দায়ের করলে উক্ত মামলা ১৮/৮/২০১৯ইং তারিখে খারিজ হয়ে যায়। এছাড়া শালিশী সিদ্ধান্তমতে তিনি আমার ২৯শতক জমি ফেরত দিচ্ছেনা এবং আমার ৩৪শতাংশ নাল জমিন অবৈধ উপায়ে তার নামে রেকর্ড করেছে বলে তিনি জানান।
আলমগীর জানান, সানাউল্যার কাছ থেকে আমারা চার ভাই মিলে যৌথ দলিলে ১৪শতক জমি ১৫বছর আগে খরিদ করি। সে দলিলের সাক্ষী গোপরান। তিনি আমাদের খরিদীয় জমি প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে তার নামে রেকর্ড করে নিয়ে হয়রানি করিতেছে বলে জানান।
আবদুল গোফরান এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার নামে জমি রেকর্ড আছে এবং তিনি খরিদ সূত্রে জমির মালিক আছেন বলে জানান। তবে তিনি মালিকানার স্বপক্ষে কোন কাগজপত্র উপস্থাপন করতে পারেননি।
No comments:
Post a Comment