স্বপ্ন যেখানে ভেসে যায় যমুনার জলে। - pratidinkhobor24.com

Breaking

Home Top Ad

Post Top Ad




Thursday 5 March 2020

স্বপ্ন যেখানে ভেসে যায় যমুনার জলে।


 মোঃ ইমরান হোসেন (আপন) চৌহালী  প্রতিনিধিঃ 
“বাবারে আমার তো বয়েস অয়্যা গ্যালো লাতি-লতিনের মুক দ্যাহাবি ন্যা? 
এই তো মা আর কিছুদিন কেবল চাকরি হইলো কয়েক মাস যাক আগে ঘরবাড়ী ঠিক করি তারপর বিয়ে করবো। 


তর বাপে মইর‌্যা যাওয়ার পরে তকে মাইনসের বাড়ী মাটি তুইল্যা লেহাপড়া করাইচি, শ্যাষ ব্যালায় ইটু সুকে থাইকপ্যার লাইগ্যা; বাড়তে লাতি-লুতকুর, বউ না থাকলি কি সুক থাহে? 
এই তো মা আর মাত্র কয়েকটা মাস অপেক্ষা করো তোমার মনের মতো একটা বউ এন দেবো। ঘরবাড়ী ভাঙ্গাচুরা থাকলে তোমার বউ মা-র থাকতে কষ্ট হবে তখন তোমারও ভালো লাগবে না মা। তুমি এতো কষ্ট করে আমাকে লেখাপড়া করাইছো যদি ভালো মেয়ে বিয়ে করতে না পারি তাহলে তো সব কষ্টই বৃথা।
হ বাবা তুই ঠিকই কইচ্যাস তালিপারে আগে গরবাড়ী ঠিক কর, তারপরে বিয়্যা কর।”
কথপোকথনগুলো সুখ স্বপ্নে বিভোর যমুনা পাড়ের এক-মা ও তার ছেলের।
এভাবেই স্বপ্ন দেখতো মা ও তার ছেলে। কিন্ত সুখ যদি কপালে না থাকে স্বপ্নগুলোও ফিঁকে হয়ে যায়! কয়েকমাস পরে বাড়ীটি রাক্ষুসে যমুনার পেটে চলে গেলো, ছেলেটার মা-ও মারা গেলো। অন্যদিকে বাড়ীটি স্থানান্তর করতে করতে ও মায়ের মৃত্যু শোক কাটিয়ে উঠতেই সদ্য পাওয়া চাকরিটাও চলে গেলো! এরই সাথে পরিসমাপ্তি ঘটলো একটি স্বপ্নেরও।
এভাবেই বছরের পর বছর ধরে যমুনার করাল গ্রাসে লক্ষ লক্ষ মানুষের যেভাবে স্বপ্নে পরিসমাপ্তি ঘটছে, ঠিক তেমনি নিঃস্বও হচ্ছে করেছে হাজার হাজার পরিবার। একটা সময় যশ-খ্যাতি, ধন সম্পদের ভাণ্ডার ছিলো এমন মানুষও আজ বসবাস করছে রাস্তার পাশে অথবা অন্যের জমি ভাড়া নিয়ে। কেউ কেউ চলে গেছেন প্রিয় জন্মভুমি ছেড়ে অন্য এলাকাতে। অনেকেই মানবেতর জীবযাপন করছেন কেউবা আবার বসবাস করছেন বিভিন্ন শহরের বস্তিতে। এভাবেই ধীরে ধীরে দেশের মানচিত্র থেকে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালী উপজেলা। নেতা গেলো নেতা এলো কিন্ত চৌহালীবাসির ভাগ্যের উন্নয়ন আর হলো না। একসময় মেজর (অবঃ) মঞ্জুর কাদের চৌহালীবাসিকে বাঁচার আশা জাগালেও বেশিদিন টিকেনি সেই আশা। পায়ে হেটে ১৫ কিঃ মিঃ পথ নিজে পরীক্ষা নিরিক্ষা করে খুব শক্তপোক্ত ভাবে একটি রাস্তা নির্মাণ করেছিলেন, মাত্র ১০-১২ বছরের ব্যবধানে আজ তার ৭০ শতাংশ নদীগর্ভে। সেই রাস্তায় নির্মাণ করা একটি ব্রিজ আজও কালের সাক্ষি হয়ে দাড়িয়ে আছে যমুনার মাঝে। চৌহালীর মানুষগুলো খুব সাধারণ, তাদের চাওয়া পাওয়াও খুব বেশি না। তারা চায় নদী ভাঙ্গন রোধ, চলাচলের জন্য রাস্তা কিন্ত বছরের পর বছর যাচ্ছে তবুও এই সামান্য চাওয়াটুকু পূরন করতে আন্তরিকতা নিয়ে এগিয়ে আসছে না কেউ। চৌহালীকে নদী ভাঙ্গন রোধ করে কালামপুর থেকে চৌহালী পর্যন্ত দুইলেন রাস্তা করা হলে চরের বিস্তীর্ণ এলাকাসহ যমুনা পাড়ের মানুষগুলো খুব কম সময়ে ও কম খরচে রাজধানীর সাথে যোগাযোগ রাখতে পারবে, সাথে ব্যবসা বাণিজ্যেরও ব্যাপক প্রসার ঘটবে। এছাড়া কমমূল্যে শ্রমিক পাওয়ার নিশ্চয়তা থাকায় এখানে মিল ফ্যাক্টরী করার অপার সম্ভাবনা দেখা দিবে। এতে করে লক্ষ লক্ষ লোকের কর্মসংস্থান যেমন হবে তেমনই ঘরের ছেলে ফিরেও আসবে ঘরে। দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারবে চৌহালীবাসী আর সরকার পাবে কোটি কোটি টাকা ট্যাক্স।
এমতাবস্থায় উল্লেখিত বিষয়গুলো বিবেচনা করে দেশ ও জনগণের কল্যাণে সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন, এ আশা নিয়েই চৌহালীর স্বপ্নচারী এখনো তাকিয়ে আছে।

No comments:

Post a Comment

Post Bottom Ad

Pages