নিউজ ডেস্ক:
স্বাধীনতা সংগ্রামে মুক্তিযুদ্ধে ছেলের অসামান্য অবদানের কথা স্মরণ করে কেঁদে ফেলেন সরকারী সুবিধা বিহিন একজন মুক্তিযুদ্ধার মা মাহমুদা খাতুন। মাহমুদা খাতুন রামগঞ্জ উপজেলার ভাটরা ইউনিয়নের দক্ষিন জয়দেবপুর গ্রামের হাসান আলী পাটোয়ারী বাড়ির মরহুম ছৈয়দ আহম্মদের স্ত্রী।
তিনি জানান স্বাধীনতা চলাকালে বঙ্গবন্ধুর আহবানে ২৬শে মার্চ তার ছেলে নূরুল হক খোকা পাটোয়ারী স্বক্রীয় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেন।
যুদ্ধকালীন সময়ে পাকবাহিনীর একটি বুলেট ছেলের পায়ে অাঘাতপ্রাপ্ত হয়। তখনি বাড়িতে সংবাদ পান নুরুল হক পাকবাহিনীর বুলেটে ইন্তেকাল করেন। এমন সংবাদে নূরুল হকের পুরো বাড়িতে শোকের মাতাম বহে চলছেন। ছেলের এমন দুসংবাদ পরের দিনেই পাকবাহিনী শাহরাস্তি উপজেলার নুরিংপুর হয়ে তার বাড়িতে হানাদেয়। যুদ্ধকালীন পুরোসময়ে মুক্তিবাহিনীর অস্থায়ী ক্যাম্প ছিল তার বাড়িতে। পাকবাহিনী জানতে পারেন ওই বাড়িতে মুক্তিবাহিনী অবস্থান করতেন। নিজবাড়িতে কয়েকবার পাকবাহিনী সাথে নিজ বাড়িতে অবস্থানরত মুক্তিবাহিনী গোলাগুলির হয়। ওই সময়ে তার শ্বামী মুক্তিবাহিনীদেরকে যাতায়াত নৌকায় বহন করতেন। মেজো ছেলে দেলোয়ার হোসেন মুক্তিবাহিনির রান্নার কাজ করতেন। মাঝেমধ্যে নৌকায় বহন করতেন মুক্তিবাহিনীদেরকে। মুক্তিবাহিনী অস্ত্র তার বসতঘরে ছিলেন।
পাকবাহিনীর গোলাগুলির শব্দ আর অাতংকে ছোট সন্তানদের কোলে নিয়ে বাড়ির পাশ্বে একটি বিলে আত্মগোপন চেষ্টা করেন মাহমুদা খাতুন।
অবস্থা বেপরোয়া দেখে একটি জলাশয় কচুরি পেনার উপর নাক রেখে পানিতে লুকিয়ে থাকার চেষ্টা করেন। কয়েকঘন্টা পরেই ধানখেতে পানিতে ভেসে পাশ্ববর্তী রামসিংপুরে যান।
পরেই জানতে পারেন গুলিবিদ্ধ হলে তার ছেলে নৃরুল হক বেচেঁ আছেন পায়ের অাঘাত নিয়ে। তিনিঁ জানান স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রায় অর্ধশতাধিক বছর পার হলেও তার ছেলে নূরুল হক পাটোযারী মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃতি পায়নি। তিনি আক্ষেপ করে কান্নায় বলেন শ্বামী,দুই ছেলে শুধু নহে পুরোবাড়ির অসামান্য অবদান থাকার পরেও কেউ পায়নি মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃতি। মাহমুদা জানান ১৯৮৬ সালে তার শ্বামী ইন্তেকাল করেন। স্বাধীনতার সংগ্রামের পরেই তার বড় ছেলে খুলনা একটি দোকানে বাইন্ডিং কাজ করতেন। অভাব অনাটনের মধ্যদিয়ে জীবন-যাপন করতেন। টাকার অভাবে বিনা চিকিৎসা খুলনা মেডিকেল হাসপাতালে নুরুল হকের মৃত্যু হয়।
২০১৫ সালে নূরুল হক জীবদ্দশায় মুক্তিযুদ্ধা মন্ত্রনালয় মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য আবেদন করেন।
কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় থেকে মুক্তিযুদ্ধ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসে প্রেরণ করেন। ওই তালিকায় ৩৫৮ নং ক্রমিকে নুরুল হকের নাম।
তালিকা আসার পরেই অনলাইনে মুক্তিযুদ্ধা মন্ত্রনালয় আবেদনও করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসে যাছাই বাছাই পরীক্ষা দেন। যাচাই-বাছাই দ্বিতীয় দিনে যাচাই বাছাই কমিটির বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট করে যাছাই বাছাই স্থগিতাদেশ হন।
নূরুল হকের কাগজপত্রে দেখা যায় তিনি যুদ্ধ কালীন সময়ে ২ নং সেক্টরে যুদ্ধ করেন। যুদ্ধকালীন সময়ে তার কমান্ডার ছিলেন ছিলেন মেজর খালেদ মোশাররফ হোসেন, অধিনায়ক ছিলেন মেজর জহিরুল হক পাঠান।
তার গ্রুপ/ প্লাটুন কমান্ডার ছিলেন সুবেদার এছাহাক মিয়া। যুদ্ধকালীন সময়ে উত্তাল ২৬শে মার্চ মাসে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ থেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। পানিয়ালা ক্যাম্পে তিনি প্রশিক্ষন নেন।
তার স্ত্রী অাঞ্জআরা বেবী জানান যুদ্ধের পরেই তার কাছে রক্ষিত কাগজগুলো হারিয়ে যায়।
অনলাইনে আবেদনে নুরুল হক পাটোযারীকে সহযোগী গ্রেজেটভুক্ত মো: সাহাজান মাষ্টার গ্রেজট নং- ৯৫৪, সাবেক কমান্ডার সালে আহমদ গেজেট নং ৫৭৮,জয়নাল আবেদিন গ্রেজেট নং-৬৯২।
নুরুল হকের বৃদ্ধা মায়ের আকুতি তার মৃত্যু আগে মৃত্যু ছেলের মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃতি দেখতে চান।
No comments:
Post a Comment