আন্তর্জাতিক নিউজডেস্কঃ
ইরানের শীর্ষস্থানীয় সেনা কর্মকর্তা জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার বদলা নিতে ইরাকে মার্কিন সামরিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে ইরান। বুধবার দুটি মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে প্রায় ২২টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ইরানি বাহিনী।
ইরানের এই মিসাইল হামলায় অন্তত ৮০ জন মার্কিন সেনা নিহত এবং আরও ২০০ জন আহত হয়েছেন বলে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে দাবি করা হয়েছে। হামলার ঘটনায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে বিভিন্ন দেশ।
বুধবার ভোররাতে ইরাকে দুটি মার্কিন সেনাঘাঁটিতে ২২টি মিসাইল ছোড়ে ইরান। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে হামলার শিকার হওয়ার কথা জানানো হলেও হতাহতের বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি।
ইরানের হামলায় বিভিন্ন দেশের প্রতিক্রিয়া-
১. যুক্তরাজ্য: যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক স্থাপনায় ইরানের এ হামলার নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাজ্য। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র সচিব বলেছেন, ইরানকে বলবো, এ ধরণের বিপজ্জনক হামলা যেন তারা আর না করেন এবং দ্রুত যেন অস্ত্র বিরতিতে যান।
২. পোল্যান্ড: পোল্যান্ডের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ইরানের হামলায় ইরাকে থাকা পোল্যান্ডের সেনাদের কোনো ক্ষতি হয়নি। তবে এই হামলা নিয়ে দেশটির অবস্থান কোনো পক্ষে তা পরিস্কার করেননি তিনি।
৩. আরব আমিরাত: সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনোয়ার গারশাল বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যের এই উত্তাপ কমানোর জন্য পারস্পারিক প্রতিশোধ নেয়া বন্ধ হওয়া দরকার। যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের উচিৎ সম্পূর্ণ অস্ত্র বিরতি পালন করা।
৪. ইরাক: ইরাকি সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইরান যে হামলা চালিয়েছে তাতে ইরাকের কোনো সামরিক সদস্য বা কোনো ইরাকি নাগরিকের ক্ষতি হয়নি। এর আগে কাসেম সোলাইমানির উপর মার্কিন হামলাকে বেআইনি বললেও ইরানের হামলার বৈধতা নিয়ে ইরাক এখনো কোনো মন্তব্য করেনি।
৫. জাপান: জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবে বলেছেন, উভয় পক্ষকে শান্তিপূর্ণ অবস্থান বজায় রাখতে জাপান সব রকম সহায়তা করবে। তবে উত্তেজনার মধ্যে জাপান প্রধানমন্ত্রীর সৌদি আরব, আরব আমিরাত ও ওমান সফর বাতিল করা হয়েছে।
৬. অস্ট্রেলিয়া: ইরানের হামলার পরপরই অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন বলেছেন, ইরাকে থাকা অস্ট্রেলিয়ান সেনাদের সবাই নিরাপদে রয়েছে। ইরাকে বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার প্রায় ৩০০ সেনা রয়েছে।
৭. ফিলিপিন্স: ইরাকে থাকা ফিলিপিন্সের নাগরিকদের দ্রুত সেখান থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়ছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখপাত্র ইদুয়ারদো মেনদেজ বলেছেন, ইরাকে বর্তমানে সতর্ক সংকেত সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ফলে সেখানে আর ফিলিপিন্সের নাগরিকদের থাকা সম্ভব নয়।
৮. পাকিস্তান: ইরাকি স্থাপনায় ইরানের হামলার পরপরই পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে ইরাকে থাকা পাকিস্তানি নাগরিকদের সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। তবে হামলার পক্ষে-বিপক্ষে তারা কোনো মন্তব্য করেনি।
৯. ডেনমার্ক: ডেনমার্কের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইরাকে থাকা ডেনিশ সেনাদের কোনো ক্ষতি হয়নি। দেশটিও হামলার পক্ষে-বিপক্ষে কোনো মন্তব্য করননি।
১০. ভারত: ভারতও হামলার বিষয়ে কোনো দেশের পক্ষ না নিয়ে ইরাকে থাকা দেশটির নাগরিকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে। একই সঙ্গে জরুরী কাজ ব্যতীত ইরাকে গাড়ি ভ্রমণ না করারও পরামর্শ দিয়েছে।
১১. নিউজিল্যান্ড: মার্কিন স্থাপনায় ইরানের হামলার প্রেক্ষিতে নিউজিল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন পিটার উভয় দেশকে অস্ত্রবিরতি পালনের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এখন দুই দেশের অস্ত্রবিরতি পালনের সময়।
১২. রাশিয়া: যুক্তরাষ্ট্রকে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে রাশিয়া। দেশটির সংসদ সদস্য ভ্লাদিমির দিজাবারভো বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র যদি আরও অগ্রসর হয় তাহলে পরমাণু যুদ্ধের মতো বিপজ্জনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।
রাশিয়ার ওই সংসদ সদস্য আরো বলেন, ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের হামলা-পাল্টা হামলার ফলে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়তে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানকে থামাতে তিনি জাতিসংঘের প্রতিও আহবান জানিয়েছেন।
No comments:
Post a Comment