করোনার টিকা আবিস্কারের দাবিদার হলো বাংলাদেশও - pratidinkhobor24.com

Breaking

Home Top Ad

Post Top Ad




Friday 3 July 2020

করোনার টিকা আবিস্কারের দাবিদার হলো বাংলাদেশও



কভিড-১৯ রোগের ভ্যাকসিন বা টিকা আবিস্কারের দাবিদার হলো বাংলাদেশও। গতকাল বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিস্কারের ঘোষণা দিয়েছে স্থানীয় প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেক লিমিডেট। এটি দেশের অন্যতম ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালসের সহযোগী প্রতিষ্ঠান। সরকারের সহযোগিতা পেলে আগামী ছয় মাসের মধ্যেই এই ভ্যাকসিন বাজারে আনতে সক্ষম বলেও জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। এর আগে বিশ্বের ১০টি দেশের প্রতিষ্ঠান ভ্যাকসিন আবিস্কারের ঘোষণা দেয়। ১১তম দেশ হিসেবে যুক্ত হলো বাংলাদেশ। দশম দেশ হিসেবে ভ্যাকসিন আবিস্কারের ঘোষণা দিয়েছিল ভারত। 


রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রতিষ্ঠানের করপোরেট কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদ এ ভ্যাকসিনের নানা দিক তুলে ধরেন। এর আগে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ও নোয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য মামুনুর রশিদ কিরণ। ভ্যাকসিন সম্পর্কে বিস্তারিত জানান গ্লোব বায়োটেকের গবেষণা বিভাগের প্রধান ডা. আসিফ মাহমুদ। 

হারুনুর রশীদ বলেন, গত ৮ মার্চ থেকে কভিড-১৯ শনাক্তকরণ কিট, টিকা এবং ওষুধ আবিস্কার সংক্রান্ত গবেষণা কার্যক্রম শুরু করে গ্লোব। এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে প্রতিষ্ঠানের গবেষণা কেন্দ্রে প্রাণীর ওপর প্রাথমিক ট্রায়াল করা হয়েছে। আর তেজগাঁওয়ের গবেষণাগারে পরবর্তী কাজ শুরু হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ের পরীক্ষায় এটি সফল হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, মানবদেহেও সফলভাবে কাজ করবে এই ভ্যাকসিন। এটি সফল হলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে তার প্রতি উৎসর্গ করতে চান বলেও তিনি জানান। 

হারুনুর রশীদ জানান, ভ্যাকসিনটি নিয়ে তারা এখন সরকারের সংশ্নিষ্ট দপ্তরে যাবেন। এরপর তাদের দেওয়া গাইডলাইন অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। মামুনুর রশীদ এমপি বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বাস্থ্যবান্ধব বর্তমান সরকার দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় গ্লোব বায়োটেক স্বাস্থ্যসেবায় নতুন নতুন চিকিৎসাসেবা উদ্ভাবনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। 

ডা. আসিফ মাহমুদ বলেন, গবেষণাগারে গবেষণার পর গত ১০ জুন ল্যাবরেটরিতে তিনটি খরগোশের দেহে তাদের তৈরি ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়। পরবর্তীতে ২১ ও ২৮ জুন আরও দু'দফা ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে অ্যান্টিবডি মিলেছে। অর্থাৎ, ভ্যাকসিনটি প্রাণীর দেহে প্রাথমিক পরীক্ষায় অ্যান্টিবডি তৈরি করতে পেরেছে। ভ্যাকসিনের বর্তমান এই অবস্থা একটি বড় অগ্রগতি বলে মনে করছে প্রতিষ্ঠানটি। এখন দ্বিতীয় ধাপে নিয়ন্ত্রিতভাবে ছোট-বড় ইঁদুরের ওপর আবারও প্রয়োগ করা হবে। এ জন্য ৬ থেকে ৮ সপ্তাহ সময় লাগবে। 

তিনি জানান, এরপর বিএমআরসির (বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল) অনুমোদন নিয়ে মানবদেহে অন্তত তিন দফা পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করতে হবে। এই প্রয়োগ সফল হলে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদন নেওয়া হবে এবং ও তৃতীয় পক্ষ বা সিআরও পরীক্ষা করা হবে। সব শেষে বাজারে নিয়ে আসার জন্য চূড়ান্ত অনুমোদন নেওয়া হবে। তিনি জানান, সরকারের সহযোগিতা পেলে আগামী ছয় মাসের মধ্যেই এই ভ্যাকসিন মানুষের কাছে পৌঁছানো সম্ভব।

ডা. আসিফ আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এনসিবিআইর (ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন) ভাইরাস ডাটাবেজ অনুযায়ী গত ৩০ জুন পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) ৫ হাজার ৭৪৩টি সম্পূর্ণ জিনোম সিকোয়েন্স জমা হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে জমা হয়েছে ৭৬টি। ওই সিকোয়েন্সগুলো বায়োইনফরমেটিক্স টুলের মাধ্যমে পরীক্ষা করে গ্লোব বায়োটেক তাদের ভ্যাকসিনের টার্গেট নিশ্চিত করে। ওই টার্গেটের সম্পূর্ণ কোডিং সিকোয়েন্স যুক্তরাষ্ট্রের এনসিবিআই ভাইরাস ডাটাবেজে জমাও দেওয়া হয়। এটা ইতোমধ্যে এনসিবিআইর স্বীকৃতি পেয়েছে। এ সিকোয়েন্স বায়োইনফরমেটিক্স টুলের মাধ্যমে পরীক্ষা করে গ্লোব বায়োটেক তাদের টিকার টার্গেট নিশ্চিত করে। এটা যৌক্তিকভাবে এই ভৌগোলিক অঞ্চলে অধিকতর কার্যকরী হবে। 

কভিড-১৯ মহামারি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার পর এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, নেদারল্যান্ডস, কানাডা, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, রাশিয়া ও ভারতের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ভ্যাকসিন আবিস্কারের ঘোষণা দিয়েছে। তবে কোনোটিই এখনও বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের অনুমতি মেলেনি। নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে জনসাধারণ পর্যায়ে ভ্যাকসিন পেতে আরও কয়েক মাস লেগে যেতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন। 

No comments:

Post a Comment

Post Bottom Ad

Pages