কমলনগরে ৩৯লাখ টাকা ব্যয়ে স্কুল ভবন নির্মাণের ২মাসের মধ্যে দেবে গেছে - pratidinkhobor24.com

Breaking

Home Top Ad

Post Top Ad




Monday 1 June 2020

কমলনগরে ৩৯লাখ টাকা ব্যয়ে স্কুল ভবন নির্মাণের ২মাসের মধ্যে দেবে গেছে




কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি  : লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে প্রায় ৩৯ লাখ টাকা ব্যয়ে স্কুলের টিনসেড (সেমি পাকা) ভবন নির্মাণে অনিয়মের অভিযােগ উঠেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। 

এ ছাড়াও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিবি) থেকে প্রায় দুই লাখ টাকা ব্যয়ে ওই স্কুল ভবন রক্ষার্থে পুকুর পাড়ে একটি গাইডওয়াল নির্মাণের ২মাসের মধ্যে নিচের মাটি সরে ফেটে ও দেবে যায়। ফলে যে কোন মূহুত্বে গাইডওয়াল ভেঙ্গে পড়ে বড় ধরণের দুর্ঘটনার ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। আবার নির্মাণাধীণ ওই বিদ্যালয়ের ভবনের পাশের পুকুর থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। 

বিদ্যালয়ের ৫০ ফুটের মধ্যে থেকে উত্তোলন করা ওই বালু ব্যবহার করা হচ্ছে নির্মাণাধীন ভবনটির ভিটি ভরাটের কাজে  অবৈধভাবে এ বালু উত্তোলনের ফলে ওই গাইড ওয়াল দেবে যেতে শুরু করেছে। হুমকির মুখে পড়েছে বিদ্যালয়টির নির্মাণাধীন ভবনসহ পুরাতন ভবন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ।
উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে 

জানা যায়, ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের শুরুতে উপজেলার লুধুয়া ফলকন ফয়জুন্নাহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের টিনশেড (সেমি পাকা) ভবন নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। মেসার্স নেহাল ট্রেডার্স নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ৩৬ লাখ ৭৩ হাজার টাকা বরাদ্দে গত বছরের ১৪ জুলাই সাত কক্ষ বিশিষ্ট ভবনটি নির্মাণের কার্যাদেশ পান। পুকুর সংলগ্ন হওয়ায় ভবন দেবে যাওয়ার আশঙ্কায় পুকুরপাড়ে গাইড ওয়াল নির্মাণের জন্য একই অর্থ বছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিবি) থেকে এক লাখ ৯৯ হাজার ৩১২ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ভবন নির্মাণকাজ শুরুর আগেই ঠিকাদার তড়িগড়ি কওে ওই গাইড ওয়ালের নির্মাণকাজ শেষ করেন। ফলে নির্মাণের দুমাস না পেরুতে তা ফেটে যাচ্ছে।

সরেজমিন ঘুরে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিন্মমানের ইট, বালু ও সিমেন্টের ব্যবহারসহ বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ভবনটির নির্মাণকাজ শুরু করেন। এ নিয়ে স্থানীয়দের বাধার মুখে বেশ কয়েকবার নির্মাণকাজ বন্ধও হয়ে যায়। সম্প্রতি পুনরায় কাজ শুরু করলে এখন ভিটি ভরাটের কাজ চলছে। কিন্তু কার্যাদেশে অন্য জায়গা থেকে মাটি এনে ভিটি ভরাটের জন্য অর্থ বরাদ্দ থাকলেও ঠিকাদার ভবনটির পাশের পুকুরে ৫০ ফুটের মধ্যে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করে সেই বালু দিয়ে ভিটি ভরাট করছেন। 

এতে করে ভবন রক্ষায় নির্মিত গাইড ওয়ালের বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দেওয়াসহ দেবে যেতে শুরু করেছে। হুমকির মুখে পড়েছে বিদ্যালয়টির নির্মাণাধীন ভবন ও পুরাতন টিনশেড ভবনসহ বিদ্যালয়ের পাশের পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ।
অথচ, বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০-এর ৪ নম্বর ধারার খ-উপধারায় উল্লেখ করা হয়েছে সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারাজ, সড়ক, মহাসড়ক, বাঁধ, বন, রেললাইন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা হলে অথবা আবাসিক এলাকা থেকে সর্বনিম্ন এক কিলোমিটারের মধ্য থেকে বালু তোলা যাবে না।

স্থানীয় আবু তাহের হাওলাদার, মোহাম্মদ হোসেন ও নুরুল ইসলাম নামে কয়েকজন অভিভাবক অভিযোগ করেন, শুরু থেকে অনিয়মের মাধ্যমে কাজ চলতে থাকলেও কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া ঠিকাদার এখন পাশের পুকুর থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে ভবন নির্মাণের সাহস পেয়েছেন।
তারা বলেন, এ বালু উত্তোলনের ফলে বিদ্যালয় ভবন হুমকির মুখে পড়ার পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীদের জীবনও চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল করিম জানান, বিদ্যালয় বন্ধ থাকার সুযোগে ঠিকাদার পাশের পুকুর থেকে বালু উত্তোলন করে ভবনের ভিটি ভরাটের মতো এ ঝুঁকিপূর্ণ কাজটি করছেন। বিদ্যালয় খোলা থাকলে ঠিকাদার এ কাজ করার সাহস পেতো না বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিষয়টি তিনি ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে জানাবেন।

নির্মাণাধীন ভবনের পাশের পুকুর থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে ভিটি ভরাটের কথা স্বীকার করে মেসার্স নেহাল ট্রেডার্সের সত্ত্বাধিকারী দিদার হোসেন জনি জানান, পুকুরের মালিক থেকে বালু কিনে তিনি এ কাজ করছেন।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) কমলনগর উপজেলা প্রকৌশলী সোহেল আনোয়ার বলেন, বিদ্যালয়টি পুকুরের পড়ে হওয়ায় ভবন রক্ষায় গাইড ওয়াল নির্মাণ করা হয়। অথচ, এখন সেই পুকুর থেকেই ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে বিদ্যালয়টির ভিটি ভরাট করা ভবিষ্যতের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ।

সাংবাদিকদের মাধ্যমে ঘটনাটি জানতে পেরে বালু উত্তোলনসহ নির্মাণকাজ বন্ধ রাখতে ঠিকাদারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোবারক হোসেন জানান, ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়টি তাকে কেউ জানায়নি। খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।

No comments:

Post a Comment

Post Bottom Ad

Pages