নিউজ ডেস্কঃ
মহামারি COVID-(19) এর কারনে সারা বিশ্ব প্রায় তিন মাস ধরে অচল। এ করোনাভাইরাস সংক্রামনে বাংলাদেশে সরকারীভাবে আজ ১০ জুন পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ১২ জন লোক মারা গেছে এবং আক্রান্ত সংখ্যাও ৭৪ হাজার ৮৬৫ জনের কাছাকাছি। বেসরকারি হিসেবে আরো কয়েকগুন বেশি হবে মৃত ও আক্রাতের সংখ্যা।
এই ক্রান্তিকালে সারা বাংলাদেশের সকল মসজিদের ইমামদের বিশেষ ভাবে সন্মানিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া সরকারি ঘোষণাকে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় প্রতারণার মাধ্যমে নয়-ছয় করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সদর উপজেলার পার্বতীনগর ইউনিয়নের ওয়াহেদপুর গ্রামের একটি মসজিদকে পাশ্ববর্তী বাঙ্গখাঁ ইউনিয়নের মহেশপুর গ্রামে অবস্থান দেখিয়ে দুই ইউনিয়নেই তালিকাবদ্ধ করা হয়েছে। প্রতারণার উদ্দেশ্যে একটিতে প্রকৃত ইমাম ও মোয়াজ্জিনের নাম লেখা হয়েছে অন্যটিতেও এতে ভুয়া ইমাম ও মসজিদ কমিটির সভাপতির নাম ও ফোন নাম্বার সংযুক্ত করা হয়েছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন, পার্বতীনগর ইউনিয়ন তথ্যকেন্দ্র ও উপজেলা নির্বাহী অফিস সূত্রে জানা যায়,করোনা করোনা ক্রান্তিকালে মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের ঈদ উপহার হিসেবে ৫ হাজার টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সরকার।
সে মোতাবেক ১৪ মে তারিখ থেকে ইসলামিক ফাউণ্ডেশন লক্ষ্মীপুর অফিস তালিকা প্রস্তুত শুরু করে। প্রাথমিকভাবে প্রতিটি ইউনিয়নে কয়েকটি মসজিদের তালিকা করা হয়।সংগত কারনে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বাঙ্গাখাঁ ইউনিয়নের মহেশপুর খালপাড় নোয়াবাড়ী জামে মসজিদের নামটি অন্তভূর্ক্তসহ অনুমোদনও করা হয়।
মহেশপুর গ্রামে এমন মসজিদের অস্তিত্ব না থাকার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইসলামিক ফাউণ্ডেশনের বাঙ্গাখাঁ ইউনিয়নের তালিকা প্রস্তুতের দায়িত্বপ্রাপ্ত ও কেন্দ্র পরিদর্শক মোঃ রহমত উল্যাহ জানান, স্বল্প সময়ে তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। এবং তালিকা প্রস্তুতে ফোনের মাধ্যমে সহযোগীতা নিয়েছেন বাঙ্গাখাঁ ইউনিয়নের মিরিকপুর জামে মসজিদের ইমাম শাহ পরানের।
ঈমাম শাহ পরানকে মসজিদ ও ভুয়া ইমামের তালিকা সরবরাহ করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে, তিনি বলেন, শুনেছি মসজিদটি বাঙ্গাখাঁয় অবস্থিত ও ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন শোয়াইব ছিদ্দিকী। ইমাম হিসেবে উক্ত মসজিদে দায়িত্ব পালন করতেছেন কিনা-শোয়াইব ছিদ্দিকীর নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, মূল ইমাম মাওলানা সাঈদ আহমেদ। তিনি ফাঁকে ফাঁকে নামাজ পড়িয়েছেন,তবে তিনি বেতনভূক্ত নন।
মসজিদটি কোন ইউনিয়নে অবস্থিত এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মহেশপুর থেকে কয়েকজন ওয়াহেদপুরে গিয়ে নোয়াবাড়ী তৈরী করেছে আর নোয়াবাড়ীর দরজায় মসজিদটি অবস্থিত। তাই মসজিদের নাম হচ্ছে মহেশপুর খালপাড় নোয়াবাড়ী জামে মসজিদ। মসজিদের মূল ইমাম মাওলানা সাঈদ এবং সভাপতি মকবুল আহম্মদ।
পরবর্তীতে পার্বতীনগর ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, একই ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের ওয়াহেদপুর গ্রামের ওয়াহেদপুর নোয়াবাড়ী জামে মসজিদের নামসহ ইমাম ও মুয়াজ্জিনের নামটি প্রধানমন্ত্রীর সরকারি ঈদ উপহার প্রাপ্তির তালিকায় অন্তভূর্ক্তির জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে প্রেরণ করা হয়েছে। ঐ তালিকায় মসজিদের ইমাম হিসেবে মাওলানা সাঈদ আহমেদ ও মোয়াজ্জেন হিসেবে আবুল কাশেমের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
দুটি তালিকা বিশ্লেষণে দেখা যায়- অসৎ উদ্দেশ্যে ঐ মসজিদের দুইটি নাম, দুইটি স্থান, দুইজন ইমামের নাম ও ইমামের সাথে দুইজন সুবিধাভোগীর (একটিতে সভাপতি ও আরেকটিতে মোয়াজ্জেন) এর নাম ব্যবহার করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শফিকুর রিদোয়ান আরমান শাকিল বলেন, জেলা ইসলামিক ফাউণ্ডেশন কার্যালয়ে আলাপ করার পরামর্শ দিয়েছেন।
জানতে চাইলে ইসলামিক ফাউণ্ডেশন লক্ষ্মীপুর জেলা উপ-পরিচালক আশিকুর রহমান বলেন, তালিকায় একাধিক নাম গ্রহনযোগ্য নয়। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে পাওয়া নাম গুলো যাচাই করার কথা। তারপরেও অভিযোগ যেহেতু পেয়েছি, তা অবশ্যই যাচাই করে দেখবো।
এদিকে মসজিদের ঈমামদের সরকারি ঈদ উপহার নিয়ে এমন প্রতারণার সাথে যারা জড়িত, তাদের যথাযথ তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী জানিয়েছেন মহেশপুর ও ওয়াহেদপুরবাসী।
No comments:
Post a Comment