ইসলামী বক্তা মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারীর লক্ষ্মীপুরের একটি ওয়াজ মাহফিলে সম্প্রতি ১১ জন নারী-পুরুষ হিন্দু ধর্ম ছেড়ে ইসলাম গ্রহণ করেন বলে সামাজিক মাধ্যমে ভিডিও ভাইরাল হয়। এর প্রেক্ষিতে পুলিশ খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারে ধর্মান্তরিত ব্যক্তিরা ভারতের নাগরিক। গতকাল শনিবার রাতে তাদেরকে ভারতীয় পাসপোর্টসহ আটক করা হয়।
আজ রোববার লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশের এসপি এ এইচ এম কামরুজ্জামান জানিয়ে ছেন, আটকদের কাছে ভারতীয় বৈধ পাসপোর্ট পাওয়া যাওয়ায় তাদেরকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে এবং যথাযথ প্রক্রিয়া মাধ্যমে তাদেরকে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে।
জানা গেছে, গত ২৪ জানুয়ারী লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার হাজীপুর পাটোয়ারী বাড়ির মাঠে অনুষ্ঠিত এক মাহফিলে আজহারীসহ আরও কয়েকজন আলেমের কালিমা পড়ে হিন্দু থেকে মুসলিম হয়েছে শঙ্কর অধিকারী নামের এক ব্যক্তি ও তার পরিবারের ১১ সদস্য।
পরে জানা যায়, শঙ্কর অধিকারী নামের ব্যক্তিটিই ছিল ছোটকালে হারিয়ে যাওয়া রামগঞ্জ উপজেলার ডাক্তার বাড়ির মজিবুল হকের ছেলে মনির হোসেন।
মনির হোসেন ওরফে শঙ্কর অধিকারীর মা ফাতেমা মেম্বার জানান, ৩০/৩৫ বছর আগে তার ছেলে মনির হোসেনের বয়স যখন ১২ বছর ছিল তখন মনির হারিয়ে যায়। এরপরে আর তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।
বহু বছর পর ফাতেমার পরিবার জানতে পারে মনির হোসেন কলকাতায় থাকেন, এবং ধর্ম ও নাম পরিবর্তন করে শঙ্কর অধিকারী নাম গ্রহণ করেছেন। এরপর ২০১৬ সালে বাংলাদেশে আসেন মনির এবং জানান তিনি ভারতে একাধিক বিয়ে করেছেন, তার সন্তান আছে।
এ বিষয়ে ফাতেমা মেম্বারের ছেলে ও মনিরের ছোট ভাই জহির উদ্দিন জানান, মনিরের সন্ধান পাওয়া যায় ২০১৬ সালে। তখন তিনি একা বাংলাদেশে এসেছিলেন এবং চেষ্টা করছিলেন কলকাতায় থাকা তার সন্তানসহ পরিবারকে নিয়ে একেবারে বাংলাদেশে চলে আসতে।
২০১৬ সালে বড় ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ হওয়ার বিষয়ে জহির বলেন, আমরা তখন জানতে পারি সে হিন্দু হয়ে গেছে। এবং হিন্দু বেশেই সে দেশে আসে। হারিয়ে যাওয়ার পর ও বাড়ি ঘরের ঠিকানা কাউকে বলতে পারেনি।
কলকাতায় থাকতে গিয়ে লোকজনের কাছে হিন্দু পরিচয় দেয়। এরপর এক হিন্দু মেয়েক বিয়ে করে। তার ঘরে সন্তানও হয়। পরে আরেকজনকেও বিয়ে করে। দুই ঘরে তার ছেলে মেয়ে আছে মোট ৮ জন। আমরা যখন ২০১৬ সালে মনির হিন্দু পরিচয় বাড়িতে আসলো তখন দুইদিনের বেশি আমাদের বাড়িতে তাকে থাকতে দেইনি। ও চলে গেছিল আবার কলকাতায়।
জহির উদ্দিন বলেন, ৬/৭ মাস আগে পরিবারের সবাইকে নিয়ে আমার ভাই দেশে চলে আসে, এবং আত্মীয়দেরকে জানায় তার স্ত্রী-সন্তানদের সবাইকে নিয়ে মুসলমান হয়ে যাবে। এতে আমরা খুশি হই এবং তাদেরকে মেনে নিই।
এরপরই গত ২৪ জানুয়ারী আনুষ্ঠানিকভাবে স্থানীয় একটি ওয়াজ মাহফিলে (যেখানে মিজানুর রহমান আজহারী অতিথি ছিলেন) ইসলাম গ্রহণ করেন।
এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুর জেলার এসপি এ এইচ এম কামরুজ্জামান জানান, মনির হোসেন নামে যিনি ধর্মান্তরিত হয়েছেন তার কাছে আমরা ভারতীয় বৈধ পাসপোর্ট পেয়েছি, যাতে তার নাম শঙ্কর অধিকারী। তার সাথে অন্য যারা আছেন তাদের কয়েকজনরও বৈধ ভারতীয় পাসপোর্ট আছে। তারা গত বছরের ১৪ আগস্ট ২ মাসের ভিসা নিয়ে বেনাপোল দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিলেন। ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরও তারা বাংলাদেশে অবস্থান করছিলেন।
ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নামে গত ডিসেম্বর মাসে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে জন্ম নিবন্ধন সনদ করা হয়েছে
No comments:
Post a Comment