রামগঞ্জপ্রতিনিধিঃ ১৯৭১ সালে ২ নং সেক্টরের অধীনে সক্রিয়ভাবে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন মোজাম্মেল হোসেন লাতু। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ডানহাতের কব্জি পর্যন্ত হারালেও চুড়ান্ত বিজয় অর্জন পর্যন্ত এক হাত নিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যায় যুদ্ধাহত এ মুক্তিযোদ্ধা। তিনি প্রথমে ভারতের উদয়পুর থেকে প্রশিক্ষন নিয়ে রামগঞ্জ থানাসহ বিভিন্ন এলাকাতে সক্রিয় ভাবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন।
কিন্তু জীবিত অবস্থায় মেলেনি মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি। এমনকি তার মৃত্যুর পরও সেই স্বীকৃতি পাচ্ছেন না তার পরিবার। মোজাম্মেল হোসেন লাতু লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ থানার চন্ডিপুর ইউপির পূর্ব চন্ডিপুর গ্রামের বড় হাফেজ সাহেবের বাড়ীর মরহুম হাজী আজিজ উল্লার ছেলে।
পারিবারিক সুত্রে জানা যায়, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে নিজের জীবন বাজি রেখে দেশমাতৃকার টানে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে। ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয়ের পূর্ব পর্যন্ত মাতৃভূমিকে মুক্ত করার জন্য দলপতির আদেশ ও নির্দেশ মোতাবেক নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন।
সংগ্রামে অংশগ্রহনের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে যুদ্ধপরবর্তী সময়ে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় কর্তৃক তার আঞ্চলিক অধিনায়ক শেখ ফজলুল হক মনির স্বাক্ষর ও তৎকালীন স্বরাষ্ট্র সচিব স্বাক্ষরিত ‘জয়বাংলা’ সীলমোহর সংবলিত সাধীনতা সংগ্রামের সনদপত্র নামের একটি সনদ প্রধান করা হয়। কিন্তু পরবর্তীকালে নানান জটিলতায় সেটি হালনাগাদ করতে তিনি ব্যর্থ হন।
ফলে স্বাধীনতা পরবর্তী তাঁর জীবদ্দশায় রাষ্ট্রীয় সকল সুযোগ-সুবিধা থেকে তিনি বঞ্চিত হয়েছেন। না পাওয়ার বেদনা নিয়ে দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর তিনি গত ১৯ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে না ফেরার দেশে চলে যান যুদ্ধাহত এ মুক্তিযোদ্ধা।এরপর থেকে তার ছেলে তারেক আজিজ ইমু বাবার শেষ ইচ্ছে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি আদায়ের জন্য মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, উপজেলা প্রশাসন, জেলা প্রশাসনে এমনকি মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ে কয়েকদফা দরখাস্ত ও দেন-দরবার করে ব্যর্থ হন।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হক বলেন, মুক্তিযুদ্ধ না করে নিবন্ধিত হওয়া দুঃখজনক, কিন্তু এর থেকে হাজার গুণ বেশি দুঃখজনক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হয়েও নিবন্ধিত না হওয়া, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি না পাওয়া। মোজাম্মেল হোসেন লাতু আমার সহযোদ্ধা হিসেবে সক্রিয়ভাবে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন, যা আমি স্বচক্ষে দেখেছি। তিনি একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।
মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হোসেন লাতুর ছেলে তারেক আজিজ ইমু জানান, আমরা ছোটবেলা থেকেই বাবার কাছে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনে বড় হয়েছি। এমনকি তার সঙ্গের মুক্তিযোদ্ধাদের কাছেও অনেক গল্প শুনেছি। বাবার শেষ ইচ্ছা ছিল, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সাহায্য পাওয়া নয়, মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাওয়া। আমি তার সন্তান হিসেবে সরকারের কাছে দাবি করছি, আমার বাবা যদি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হন, তবে তাকে যেন মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার সালেহ আহমদ বলেন,তিনি একজন সঠিক মুক্তিযোদ্ধা এটা আমি জানি। অথচ গেজেটে নাম না থাকায় আমার পক্ষে কিছুই করা সম্ভব হয়নি।
এব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাচাই কমিটির সভাপতি বীর মু্িক্তযোদ্ধা আকম রুহুল আমিন বলেন, মোজাম্মেল হোসেন লাতু একজন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহন করেন। এবং তার পরবর্তী সময় থেকে আওয়ামী রাজনীতীর সাথে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত ছিলেন। তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চন্ডীপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন।
No comments:
Post a Comment