রামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ দেশের স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নে সরকার প্রতিটি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রে একজন করে মেডিক্যাল অফিসার ও একজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার নিয়োগ দিলেও লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার চন্ডীপুর ইউনিয়নের চাঙ্গীরগাঁও স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রে গত ৩ বছর ধরে মেডিক্যাল অফিসার নেই । উপসহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার থাকলেও তিনি আসেন সপ্তাহে দুই দিন। এতে চরম ভাবে ব্যাহত হচ্ছে ঐ অঞ্চলের স্বাস্থ্য সেবা। সে সাথে চরম ভোগান্তিতে পড়ছে বিভিন্ন গ্রাম অঞ্চল থেকে চিকিৎসা নিতে আসার রোগীরা। উপজেলা শহর দূর হওয়ায় এ অঞ্চলে মানুষের চিকিৎসার একমাত্র ভরসা হাসপাতালটি। সরেজমিনে গেলে সকাল ১১ টার সময় হাসপাতালের দরজা বন্ধ দেখে রোগীদের বাহিরে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। পার্শ্ববর্তী চা দোকানদার জাহাঙ্গীর দৌড়ে এসে তালা খুললে হাসপাতালে ঢুকেই চোখে পড়ে রোগীদের জন্য কেনা একটি বেড। অযত্নে অবহেলায় বেডটি ভেঙ্গে পড়েছে। মেডিক্যাল অফিসারের কক্ষে আসবাবপত্র ময়লা ও মেঁঝেতে শেওলা পড়ে আছে। এক কথায় জনগনের স্বাস্থ্য সেবা দিতে প্রস্তুত নয় হাসপাতালটি।
স্বামী সন্তান হারা ৯০ বছর বয়সী আম্বিয়া বেগম বলেন, ঠান্ডা, ব্যাথা ও জ্বর জনিত রোগে ভূগছিলেন তিনি। ৩ দিন ধরে ডাক্তার দেখাতে হাসপাতালে এসে প্রতিদিনই ডাক্তার না পেয়ে নিরাশ হয়ে বাড়ী ফিরতে হয় তাকে। এমন শতাধিক রোগী প্রতিদিন ডাক্তার না পেয়ে বাড়ীতে ফিরে যায়।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, গত ৩ বছরে এক দিন ও এখানে চিকিৎসার সেবা দিতে আসেনি নিয়োগ প্রাপ্ত মেডিক্যাল অফিসার ডাক্তার মাহমুদ হোসেন চৌধুরী। আর উপসহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন স্বপন আসেন সপ্তাহে ২ দিন। হাসপাতালটির দ্বিতীয় তলায় তার থাকার জায়গা থাকলেও তিনি সেখানে থাকেন না। থাকেন তার পৈত্রিক বাড়ী নোয়াখালীর হাসান হাট এলাকায়।
হাসপাতালটির পরিবার কল্যান কেন্দ্রের মেরিনা মজুমদার জানান, মেডিক্যাল অফিসার এখানে আসেন না, তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়মিত রোগী দেখেন। উপসহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার সপ্তাহে প্রতি রবিবার ও বৃহস্পতিবার নোয়াখালী থেকে আসেন। সপ্তাহের অন্যান দিনগুলো রোগীরা এসে ডাক্তার না পেয়ে চলে যায়।
উপসহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন স্বপন তার এখানে থাকার ইচ্ছে নেই জানিয়ে বলেন, এখানে প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ রোগী হয়। সপ্তাহে দুইদিন নোয়াখালী থেকে এখানে এসে রোগী দেখেন তিনি। বাকী দিন গুলোতে নোয়াখালীর হাসান হাট মা-মনি মেডিক্যাল হলে নিয়মিত ব্যক্তিগত চেম্বার করেন বলেও জানান তিনি।
এব্যাপারে জানতে চাইলে ডাঃ মাহমুদ হোসেন চৌধুরী বলেন, কর্তৃপক্ষ তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়মিত ডিউটি দেওয়ায় চাঙ্গীরগাঁও স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রে যাওয়া সম্ভব হয় না। তবে মাঝে মাঝে তিনি সেখানে গিয়ে ঘুরে আসেন বলেও জানান।
এব্যাপরে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ গুনময় পোদ্দার বলেন, চিকিৎসক সংকট থাকায় ডাঃ মাহমুদ হোসেন চৌধুরীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রাখা হয়েছে। নতুন চিকিৎসক আসলে এ সংকট সমাধান হবে। তবে উপসহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন স্বপনের অনিয়মের কারনে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
No comments:
Post a Comment