নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ পৌরসভার হাটবাজার ইজারার দুই বছরের চল্লিশ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে পৌর মেয়র আবুল খায়ের পাটওয়ারীর বিরুদ্ধে। পৌরশহরের একমাত্র মাছ ও কাঁচা বাজার বিগত ২ বছর টেন্ডার আহ্বান না করে ব্যাক্তিগত ভাবে ইজারা দিয়ে ৪০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। এতে একদিকে যেমন রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত সরকার, অন্যদিকে উন্নয়ন বঞ্চিত হয়েছে পৌর বাসিন্দারা। জনগনের ভাগ্য উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিবার্চিত জনপ্রতিনিধির এমন কর্মকান্ডকে কেন্দ্র করে পৌরবাসীর মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, রামগঞ্জ মাছ ও কাঁচা বাজারের নতুন ভবনের নির্মান কাজ শুরু হলে ২০২০সালের শেষের দিকে পৌর আঙ্গারপাড়া (পাকা মাথার) এলাকার ব্যবসায়ী ছালেহ আহম্মদের কাছ থেকে বর্তমান মাছ ও কাঁচা বাজারের জায়গাটি ১ লাখ টাকা দিয়ে লীজ নেয় পৌর কর্তৃপক্ষ। পরে সেখানে পৌরসভার অর্থায়নে প্রায় ৮ লক্ষ টাকা ব্যয় করে সেড নির্মান করে মেয়র। ওই বছর (বাংলা ১৪২৮ ও ইংরেজী ২০২১) সালে যথারীতি পৌরসভা থেকে ১৮ লক্ষ টাকা ইজারা দেয়া হয়। লীজ পায় মাছ ব্যবসায়ী নজির আহম্মদ। কিন্তু পরবর্তি ১৪২৯ বাংলা ও ১৪৩০ সালে বিধি অনুযায়ী ইজারা না দিয়ে বছরে বিশ লাখ টাকা মূল্যে ব্যাক্তিগতভাবে অতি গোপনে মাছ ব্যবসায়ী নাজির আহম্মদকে মৌখিকভাবে ইজারা দেয় পৌর মেয়র। এরপর থেকে নিয়মিত ব্যাবসা চালিয়ে যাচ্ছে মাছ ব্যাবসায়ী নজির আহম্মেদ। এতে গত দুই বছরে ৪০ লক্ষ টাকা রাজস্ব হারিয়েছে রামগঞ্জ পৌরসভা।
তবে ইজারাদার ব্যাবসায়ী নজির আহমেদ দাবী করে বলেন, আমি পৌর মেয়রের সাথে চুক্তি মোতাবেক প্রতি বছর ২০ লক্ষ টাকা করে দিয়ে ব্যবসা করে আসছি ।
বর্তমান মাছ ও কাঁচা বাজার জায়গার মালিক ব্যবসায়ী ছালেহ আহমেদ বলেন, পৌরসভার পুরাতন বাজারের (মাছ ও কাঁচা বাজার) নতুন ভবন নির্মান কাজ শুরু হলে পৌর মেয়র আমার কাছ থেকে মাছ ও কাঁচা বাজারের জন্য বছরে ১ লক্ষ টাকা করে জায়গাটি লীজ নিয়েছেন। পরে পৌরসভা ৮ লাখ টাকা ব্যয়ে বাজারের জন্য সেড নির্মান করেন। চলতি বছর ২০২৩ সালে আমি লীজ বাতিল করতে চাইলে, মেয়র আমাকে ডেকে এ বছর সময় নেয়। তবে চলতি বছরে ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পৌর সাবেক কর্মকর্তা বলেন, পৌরসভার আয়ের একটি বড় অংশ আসে পৌর মাছ বাজার ও কাঁচা বাজার ইজারা দেয়ার মাধ্যমে। পৌরসভার অর্থায়নে নির্মিত সেডেই বসছে বাজার । বিধিবিধান অমান্য করে মেয়র কেন পৌরসভার বড় আয়ের এ খাতটি ইজারা দেয়নি, তা আমার জানা নেই।
পৌরসভা এলাকার বাসিন্দা কামাল হোসেন, আনোয়ার হোসেন, রহমতুল্লাহ, বেলাল আহমেদ, আকবর হোসেন ও শহীদুল ইসলামসহ কয়েকজন এ ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, মানুষের ট্যাস্কের টাকায় পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ৮ লক্ষ টাকা ব্যয় করে বাজারের সেড নির্মান করেন। প্রথম বছর ১৮ লক্ষ টাকায় ইজারা দিলেও বিগত ২ বছর ইজারা না দিয়ে ৪০ লাখ টাকা কারা আত্মসাৎ করছে, তা বের করতে হবে। দোষীদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করতে সংশ্লিষ্ট কতর্ৃপক্ষের কাছে জোর দাবী জানান তারা। এসময় বাসিন্দারা আরো বলেন, পৌরসভা এলাকার রাস্তাঘাটসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত পৌর এলাকার বাসিন্দারা । ৪০ লক্ষ টাকা পৌররাজস্ব আদায় হলে, কয়েকটি রাস্তাতো সংস্কার করা যেতো।
এব্যাপারে জানতে চাইলে পৌর মেয়র আবুল খায়ের পাটোয়ারী বলেন, গত দুই বছর যাবৎ আমাদের রামগঞ্জ মাছ ও কাঁচা বাজারের নতুন ভবনের নির্মাণের কাজ চলছে, তাই মাছ ও কাঁচা বাজার টেন্ডার দেওয়া সম্ভব হয়নি। আমি বর্তমানে ঢাকায় আছি , আসলে বিস্তারিত বলবো।
লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান বলেন, এব্যপারে আমি অবগত নয়। তবে, বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
No comments:
Post a Comment