রামগঞ্জ (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধিঃ
লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে উপকারভোগী মহিলাদের ভিজিডি কর্মসূচির তালিকায় চেয়ারম্যানের নিকট আত্মীয়, মহিলা সদস্য, প্রবাসীসহ স্বচ্ছল পরিবারের নাম রয়েছে।
এছাড়া উপকারভোগীরা গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের চাল পায় নাই। এতে সরকারের উদ্দেশ্য ব্যহত হচ্ছে। উপজেলার নোঁয়াগাও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন রানার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ভিজিডির তালিকা অনুযায়ী খোঁজ নিয়ে চেয়ারম্যানের বোন, গাড়ি চালক, মহিলা মেম্বার, প্রবাসী ও স্বচ্ছল নারীদের নাম থাকার সত্যতা পাওয়া গেছে। এরমধ্যে অনেকের বাড়িই বহুতল ভবন। চেয়ারম্যান রানা তার পছন্দের লোকজনকে দিয়ে ভিজিডির তালিকা করেছেন। এ তালিকায় নাম দিতে চেয়ারম্যানের লোকজন প্রত্যেকের কাছ থেকে ১ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা নিয়েছেন।
মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, প্রতিটি ইউনিয়নের ১০০ জন উপকারভোগী মহিলাকে ভিজিডি কর্মসূচির আওতায় এনে প্রতিমাসে ৩০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়। তবে ২০ থেকে ৫০ বছর বয়সী অসহায় দরিদ্র মহিলাদের তালিকায় নাম আসবে। কর্মক্ষম, দুস্থ, বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত, স্বামী পরিত্যক্তা, উপার্জনক্ষম ও যাদের আয়ের কোন উৎস্য নেই এমন মহিলাদের শনাক্ত করতে হবে। প্রত্যেককেই একই ইউনিয়নের বাসিন্দা হতে হবে। ঘরের দেয়াল মাটির/পাটকাঠি বা বাঁশের তৈরি ও পরিবারে প্রতিবন্ধী সদস্য আছে এমন মহিলাদের শনাক্ত করতে হবে। একটি পরিবারে একজনই এ সুবিধা পাবে।
এদিকে সরকারি নিয়ম অমান্য করে নোঁয়াগাও ইউপি চেয়ারম্যান রানা নিজের বোন, গাড়ি চালক, মহিলা মেম্বার, টাকার বিনিময়ে প্রবাসী ও স্বচ্ছল পরিবারের নারীদেরকে তালিকায় অন্তভূক্ত করেছে। চেয়ারম্যান ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে একেকটি নামের বিনিময়ে ১ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
ভিজিডি তালিকা সূত্র অনুযায়ী খবর নিয়ে জানা যায়, তাছলিমা বেগম নামে এক নারীর কাছ থেকে ৫ হাজার টাকাসহ প্রত্যেকটি নাম বা কার্ডের বিপরীতে টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। চেয়ারম্যানের অনুসারী সংরক্ষিত ইউপি সদস্য নাছরুমা বেগম ভিজিডি তালিকার জন্য মানুষের কাছ থেকে টাকা উত্তোলন করেছেন। এ তালিকায় প্রবাসী, ব্যবসায়ী ও অন্য ইউনিয়নের একাধিক নাম আছে। যাদের অনেকের বাড়িই পাকাভবন আছে। চেয়ারম্যান রানার বোন আছিয়া খাতুন, গাড়ি চালক ফারুক হোসেন শেখের স্ত্রী নাছরিন বেগম, সংরক্ষিত ইউপি সদস্য সুলতানা রাজিয়া ও ইউপি সদস্য মেহেদী মাসুদের স্ত্রী তাহমিনাও ভিজিডি তালিকার অন্তরভূক্ত। চেয়ারম্যানের বোন আছিয়ার স্বামী মোহাম্মদ আবুল হাসনাত সৌদি প্রবাসী। বাড়িতে পাকা ভবন থাকলেও আছিয়া সরকারি ঘরও পেয়েছেন। গাড়ি চালকের বাড়িতে পাকা ভবন রয়েছে। আর আইন অনুযায়ী ভিজিডির তালিকায় ইউপি মেম্বারের নাম অবৈধ। এছাড়া অন্য ইউনিয়নের নারীদেরকে এ প্রকল্পের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। তালিকা অনুযায়ী উল্লেখিত ঠিকানায় অনেককেই পাওয়া যায়নি। আশ-পাশের লোকজনও ছিনেন না। নোয়াগাও মুন্সি বাড়িতে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী ৭টি পরিবার কার্ড পেয়েছেন। এটি চেয়ারম্যানের বোন আছিয়ার শশুর বাড়ি। চেয়ারম্যান ভাই ইব্রাহিম ক্বারীর ভেক্যু চালক তোফাজ্জাল হোসেনের স্ত্রী মনোয়ারা বেগমও এ তালিকায় রয়েছে।
অন্যদিকে ২৮ জানুয়ারি ও ২৩ ফেব্রুয়ারি ভিজিডির তালিকাভূক্ত ১০০ জন উপকারভোগী মহিলার মাঝে ৩০ কেজি করে চাল বিতরণ করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েকজনের নামে ভিজিডি কার্ড করা হয়েছে। তবে তারা এ সম্পর্কে অবগত নয়। চেয়ারম্যান রানা ভূয়া কিছু নামে ভিজিডি কার্ড তৈরি করে অন্যত্র চাল বিক্রি করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) ইসমাইল হোসেন বলেন, নোঁয়াগাও ইউনিয়নের ভিজিডির চালগুলো এখনো উত্তোলন করেনি। তবে চালগুলো নিয়ে যাওয়ার জন্য মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ও ইউপি চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে।
সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য নাছরুমা বেগম বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য নয়। এছাড়া আমি চেয়ারম্যানের ক্ষতি হবে এরকম কোন কাজ করি না। আমার বিরুদ্ধে একটি মহল উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে অভিযোগ করা হচ্ছে।
ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন রানা বলেন, মেম্বাররা খরচের কথা বলে কিছু টাকা নিতে পারে, এরসঙ্গে আমি জড়িত নয়। চালগুলো গুদাম থেকে উত্তোলন করতে পারিনি। দুই মাসের চাউল একসঙ্গে সুফল ভোগীদের কয়েকদিনের মধ্যে দেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাপ্তি চাকমা বলেন, ইউপি সদস্য কিংবা স্বচ্ছলরা এ তালিকায় অন্তভূক্ত হওয়ার কথা না। কেউ বিষয়টি আমাকে জানায়নি।
No comments:
Post a Comment