লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
চোর সাজিয়ে এক কৃষককে মারধর করে হাত-পা ভেঙে দেওয়াসহ তার পুরো শরীর জখম করা হয়েছে। এ ঘটনায় বর্তমানে কৃষক আলী হোসেন হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। পরিবারের অভিযোগ, পূর্বশত্রুতার জের ধরে চোর সাজিয়ে হত্যা উদ্যেশে তাকে মারধর করা হয়। গত বুধবার রাতে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের চর কাছিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় রায়পুর থানায় ৮ জনের নাম উল্লেখসহ আজ্ঞাত আরো ৪-৫ জনকে আসামী করে মামলা করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোন আসামীকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
মামলা ও কৃষকের পারিবার সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় মো. নুরনবী মাঝিদের সাথে কৃষক আলী হোসেনের দোকান ও জায়গা জমি নিয়ে পূর্ব থেকে বিরোদ চলে আসছিল। তারা কৃষক আলী হোসেনের জায়গা জমি ও দোকানঘর দীর্ঘদিন থেকে জোরপূর্বক দখল করার চেষ্টা করে আছে। এ নিয়ে এলাকায় একাধিক বার শালিশ হলে নুর নবী মাঝিরা হেরে যায়। এতে নুর নবী মাঝিরা ক্ষিপ্ত হয়ে কৃষক আলী হোসেনকে প্রকাশ্যে একাধিক বার মারধর করে হত্যার হুমকি প্রদান করে। গত বুধবার রাতে আলী হোসেন তার স্ত্রীর সাথে পারিবারিক বিষয় নিয়ে ঝগড়া করে। স্ত্রীর সাথে ঝগড়া করে আলী হোসেন রাতে বাড়ির দক্ষিণ পাশে গমার ভিটির খালি জায়গায় বসে ছিল। এ সময় হোসেনকে একা বসে থাকতে দেখে নুর নবী মাঝিরা পূর্বশত্রুতার জের ধরে পরিকল্পিতভাবে ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিয়ে গ্রামে চোর ঢুকেছে বলে প্রচার করে। পরে মো. নুর নবী মাঝি, মো কামরুল, মো. আবদুল, মো. রাকিব, বেলাল ডাক্তার, শাহজাহান খাঁ, আবদুল হাই, লোকমান হোসেনসহ আরো ৪-৫ জন পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে চোর বলে চিৎকার দিয়ে হোসেনের ওপর হামলা চালায়। হামলাকারীরা প্রথমে হোসেনের মাথায় ধারালো চেনি দিয়ে কোপ দেয়। পরে তারা তার দুই হাত ও দুই পা ভেঙে দেয়। এছাড়া তারা দল বেধে হোসেনের পুরো শরীরে আঘাত করে তার পুরো শরীর জখম করে। এ সময় হোসেনের চিৎকারের স্থানীয় মনির ও বাশার নামে দুই জন তাকে উদ্ধার করতে গেলে হামলাকারীরা তাদের ওপরও হামলা চালায়। পরে স্থানীয়রা এগিয়ে আসলে তারা পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা হোসেনকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। বর্তমানে হোসেন হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। হোসেনের অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় তাকে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতাল থেকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে প্রেরন করা হয়েছে।
এদিকে ঘটনার পর ওই এলাকায় খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, ওই দিন রাতে চর কাছিয়া গ্রামে কোন চুরির ঘটনা ঘটেনি। এ বিষয়ে স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িতে কেউ চুরির ঘটনায় কোন অভিযোগও দায়ের করেন নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন জানান, পূর্বশত্রুতার জের ধরে চোরের নাটক সাজিয়ে পরিকল্পিত ভাবে হত্যার উদ্যেশে আলী হোসেনকে মারধর করে নুরনবী মাঝিও তার লোকজন।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, মূলত নুর নবী মাঝিরা আমার জমি ও দোকানঘর দখল করতে না পেরে আমাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী মিথ্যা অপবাদে দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্র দিয়ে আমাকে হত্যা করতে মারধর করা হয়। আমি এই ঘটনায় প্রশাসনের নিকট সুষ্ঠু বিচার চাই।
লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. আনোয়ার হোসেন জানান, আলী হোসেন হাত-পা ভাঙা অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তার অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় তাকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে প্রেরন করা হয়েছে।
রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. তোতা মিয়া জানান, হামলার ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশি অভিযান চলছে।
No comments:
Post a Comment