অনলাইন নিউজ ডেস্ক ঃ
কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে আপন চাচা কর্তৃক ভাতিজিকে (১৪) দিনের পর দিন ধর্ষণে সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার বাঙ্গড্ডা ইউনিয়নের হেসিয়ারা গ্রামে চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে। ধর্ষক চাচা সোহেল (৪৫) একই গ্রামের আবদুল মন্নানের ছেলে। এ ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, কিশোরি মেয়েটির মা দীর্ঘদিন থেকে ডায়াবেটিস রোগে শয্যাশায়ী ছিলেন।
মা বিভিন্ন সময় ডাক্তার দেখাতে হাসপাতালে চলে যেতেন। বাড়িতে থাকলে অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে থাকতেন চাচা সোহেল সুযোগ বুঝে ঘরে ঢুকে তাকে ধর্ষণ করে আসছিল। গত ৪ মে মেয়েটির মা মারা যাবার পর বাড়ির মহিলারা ঘরে এসে মেয়েটির শারিরীক অবস্থার পরিবর্তন দেখে তার অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার বিষয়টি টের পায়।
পরে সোহেলের স্ত্রী মেয়েটির অন্তঃস্বত্ত্বা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে বাচ্চা নষ্ট করার জন্য বিভিন্ন ক্লিনিকে যায়। কিন্তু চিকিৎসকরা এ সময়ে বাচ্চা নষ্ট হলে মেয়ের জীবনহানির আশঙ্কায় বাচ্চা নষ্ট করা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেয়।
গত ২৬ মে’র পর থেকে এলাকাবাসীর মাঝে বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়। যা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে পড়ে। এলাকার তরুণ ও সচেতন মহল এ বিষয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে কিশোর চাচা সোহেলের বিচার দাবি করে।
এলাকার তরুণ ও সচেতন মহল এ বিষয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে কিশোর চাচা সোহেলের বিচার দাবি করে।
বিষয়টি মিমাংসার জন্য গত ৭ জুন হেসিয়ারা গ্রামের সমাজপতিরা সালিশ বৈঠকে বসেন। সালিশে ওই কিশোরি ঘটনার জন্য চাচা সোহেলকে দায়ী করে সমাজপতিদের নিকট জবানবন্দি দেয়। কিন্তু সোহেল ঘটনাটি অস্বীকার করে। এসময় সমাজপতিরা সোহেলকে ঘটনাটির স্বীকারোক্তি দেয়ার জন্য ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয় এবং স্বীকারোক্তি না দিলে থানায় মামলা করে মেয়ের ডিএনএ টেস্ট করে অনাগত সন্তানের পরিচয় বের করা হবে বলে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়। ৯ জুন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত সমাজপতিরা পুনরায় সালিশে বসার কথা থাকলেও সমাজপতিদের সমন্বয়হীনতায় শেষ পর্যন্ত সালিশ অনুষ্ঠিত হয়নি। গত পাঁচদিনেও সামাজিকভাবে বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধান না হওয়ায় এলাকায় উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এর মধ্যে সোহেল তার ৩টি গরু প্রায় ৪ লাখ টাকায় বিক্রি করে সমাজপতি ও ক্ষতিগ্রস্ত কিশোরির মেয়ের বাবার মুখ বন্ধ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। এলাকার তরুণ ও সচেতন মহল বিষয়টির সুষ্ঠু বিচারে সোচ্চার থাকলেও কতিপয় সমাজপতি বিচারের নামে সময়ক্ষেপণ করে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগে জানা গেছে।
এদিকে সোহেল প্রকৃত ঘটনা থেকে নিজেকে আড়াল করতে হেসিয়ারা গ্রামের সমাজপতি পোস্টমাস্টার আবুল হাশেমের ছেলে রিয়াদ ঘটনার সাথে জড়িত বলে এলাকায় প্রচার করলেও কিশোরি তার জবানবন্দিতে চাচা সোহেল ছাড়া অন্য কাউকে দোষারোপ করেননি।
কিশোরির ভাই রাসেল জানান, আমাদের সাথে কারো শত্রুতা নেই। আমরা নিরীহ মানুষ। যে আমার বোনের জীবন নষ্ট করেছে, আমি ও আমার বোন তার উপযুক্ত বিচার দাবি করছি। ন্যায়বিচার না পেলে আমি ও আমার বোন আত্মহত্যা করতে বাধ্য হবো। এছাড়া আমাদের আর কোন উপায় নেই।
কিশোরীর অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত সোহেল জানান, স্থানীয়ভাবে বিষয়টি মিমাংসার চেষ্টা চলছে। সালিশে আমি দোষী হলে যে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে তা আমি মেনে নিব।
স্থানীয় বাঙ্গড্ডা ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান মজুমদার বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমার কাছে কেউ আসেনি। স্থানীয়ভাবে মিমাংসার জন্য বসেছে বলে জানতে পেরেছি। ঘটনার সাথে যেই জড়িত থাকুক, তার শাস্তি দাবি করছি।
নাঙ্গলকোট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী জানান, এ বিষয়ে এখনো কেউ থানায় অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
No comments:
Post a Comment