"সামাজিকতা" বহুলপ্রচলিত একটি জনপ্রিয় শব্দ। পথে-প্রান্তরে, হাটে-বাজারে, স্কল-কলেজে এবং উচ্চ শিক্ষার স্থান বিশ্ববিদ্যালয়সহ সর্বত্র এই শব্দের রাজত্ব। বিয়ে-শাদি থেকে শুরু করে চাকরি এমনকি সামাজিক কোন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনেও ব্যাক্তির অন্যান্য পরিক্ষা বাদ থাকলেও সামাজিক আচরণ পরিক্ষা না করে ছাড় দেয়া হয়না। সামাজিক আচরণ বলতে সমাজে ব্যক্তির অন্যান্য মানুষের সাথে কথা-বার্তা, হাটা-চলা, ব্যবসা-বাণিজ্য আচার-ব্যবহার ইত্যাদি সুষ্ঠু উপায়ে পরিচালনাকে বুঝায়। সারা পৃথিবী ব্যাপী এই সামাজিকতা শব্দটিকে হঠাৎ করে বর্জন করা হয়েছে। দুজন ব্যক্তির মধ্যে হাত মেলানো, খুব কাছাকাছি হয়ে আলোচনা করা, সব বন্ধ করা হয়েছে। মানুষের জীবন থেকেও প্রিয় সব রকমের ধর্মানুষ্ঠান এবং ধর্মীয় উপাসনালয় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বাবার মৃত্যতে ছেলে মনঃকষ্টে কাতর হলেও স্পর্শ করতে পারছেনা, ছেলের মৃত্যুতে বাবা কাছে আসছেনা। চীনে দেখালাম মা ছেলেকে দেখে দূর থেকেই চোখের পানি ফেলছে, কাছে আসার উপায় নেই। সব ধরনের সামাজিকতা আজ বন্ধ। কত প্রেমিক-প্রেমিকা একজনের জন্য অন্যজন জীবন দান করবে বলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিল আজ একজনের জন্য অন্য জন আর মায়াকান্না দেখাচ্ছেনা। আজ সবাই বাস্তবতার সম্মুখীন। সারা পৃথিবীতে যখন সামাজিকতা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হয় তখন বাংলাদেশকে র্যাংকিকে এগিয়ে পাওয়া যায়। অথচ এই দেশেও আজ সামাজিকতা শব্দটি প্রত্যাখ্যাত। কেউ আর সামাজিকতা রক্ষা করছেনা। সবাই কেমন আসামাজিক আচরণ করছে। কেউ হাত বাড়িয়ে দিলে আর অন্যজন হাত বাড়িয়ে দুজনের সামাজিকতা বিনিময় করছেনা। সবার মাঝে এক অজানা আতংক বিরাজ করছে। জানাজায় লোক সমাগম হচ্ছেনা। শ্মসানঘাটে শবদাহ করার সময় মানুষের উপস্থিতি নেই। হাসপাতালে রোগী রেখে ডাক্তার পলায়ন করছে, আবার রোগীও হাসপাতাল থেকে ভয়ে পলায়ন করছে যদি তার সাথে সামাজিক আচরণ না করা হয়। বিদেশ থেকে বছর পরে আপনজন আসলেও তাকে ঘরের বাইরে রাখা হচ্ছে অথচ কিছুদিন পূর্বেও তার সাক্ষাৎ পাওয়ার আশায় পরিবারের সবাই ব্যতিব্যস্ত ছিল৷ স্ত্রী তার স্বামীকে রেখে চলে গিয়েছে, কয়েকদিন আগেই পত্রিকার বরাতে সবাই এই খবর জানতে পেরেছে।
বন্ধুবান্ধব যারা একবেলা দেখা না করলে দিনই পার করতে পারতনা তারা আর এখন দেখা করেনা। খেলার মাঠ ফাকা পরে আছে, কেউ আর খেলতে আসে না। বাজারে চায়ের দোকানে আর চুলা জ্বলে না। হঠাৎ করে সবাই কেমন আসামাজিক হয়ে গেছে। আসলেই আমরা আসামাজিক হয়ে গেছি নাকি আমাদের আসামাজিক হতে বাধ্য করা হয়েছে? হ্যা, আমাদের অসামাজিক হতে বাধ্য করা হয়েছে। কারণ ভবিষ্যতে যেন আমারা আরো শক্তি নিয়ে ফিরতে পারি এবং আরো সামাজিক হতে পারি এজন্য আমাদের খুব স্বল্প সময়ের জন্য অসামাজিক হতে হবে। সারাবিশ্বে প্রাণঘাতী করোনা মহামারী থেকে বাচতে এবং এর বিস্তার রোধে আমাদেরকে অবশ্যই এই মুহুর্তে কিছুদিনের জন্য অসামাজিক হতে হবে। সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখার নির্দেশ আমরা যদি প্রথম থেকেই খুব কঠোরভাবে পালন করতাম তাহলে হয়ত আমাদের দেশের ৬০ টি জেলায় এই প্রাণঘাতী করোনা পৌছতে পারতনা। আমরা সতর্ক হই এবং ঘর থেকে জরুরী প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না বের হওয়ার প্রতিজ্ঞা করি। বাইরে যাওয়ার আগে মাস্ক ব্যবহার করি এবং বাইরে থেকে এসে ভালোভাবে হাত সাবান বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দ্বারা পরিস্কার করি। আমাদের চারপাশে যারা আছে তাদের সবাইকে নিজ দায়িত্বে দুরত্ব বজায় রেখে যতটুকু পারি সতর্ক করি। এই সংকটের মুহূর্তে আমরা আবেগ বর্জিত হয়ে বিবেক দিয়ে চিন্তা করে সংকট কিভাবে দ্রুত কাটিয়ে উঠা যায় সেই চেষ্টা করি। সেই সাথে সরকার নির্দেশিত নীতিগুলো মেনে চলি। আর একজনও যেন নতুন করে আক্রান্ত না হয় সেই কামনাই করি। নতুন করে যেন আমরা আবারো সামাজিকতায় অগ্রগামী হতে পারি। নিজে সচেতন থাকি, অপরকে সচেতন করি। সামাজিকতা ফিরিয়ে আনতে সল্প সময়ের জন্য আসামাজিক হওয়ার স্লোগান দিয়ে শেষ করছি,"ঘরে থাকুন, সুস্থ থাকুন"।
লেখক
মোঃ শফিকুল ইসলাম নিয়ামত
শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
No comments:
Post a Comment