ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিনের চোখের আলোয় দেখছেন রেশমা - pratidinkhobor24.com

Breaking

Home Top Ad

Post Top Ad




Friday 21 February 2020

ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিনের চোখের আলোয় দেখছেন রেশমা



মোঃ ইমরান হোসেন (আপন)

 চৌহালী প্রতিনিধি 
যার দৃঢ় নেতৃতে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ উর্দূকে প্রতিহত করা আন্দোলনে মায়ের ভাষাবাংলা প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল,সেই সংগ্রামের আহবায়ক প্রয়াত ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিন নেই কিন্তু বেঁচে আছে এই মহান সংগ্রামীর দু’টি চোখ।



তার চোখ আজো দেখে যাচ্ছে বাংলার আকাশ। দেখছে একুশে ফেব্রুয়ারি। মৃত্যুবরণ করেও পৃথিবীর আলো রঙ রূপ মূর্ত ভাষা মতিনের চোখে!

২০১৪ সালের ৮ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন। মরণোত্তর দান করে যান চক্ষু ও দেহ।

মহান সংগ্রামীর দান করে যাওয়া দুটি চোখের কর্নিয়ার মধ্যে একটি স্থাপন করা হয়েছে ঢাকার ধামরাইয়ের সুয়াপুর ইউনিয়নের রেশমা নাসরিনের চোখে। হঠাৎ অন্ধকার হয়ে যাওয়া যে চোখে তিনি ২৪টি বছর কিছুই দেখতে পাননি সেই চোখে আলো ফিরিয়ে দেয় ভাষা মতিনের খের কর্নিয়া।

রেশমা জানালেন, আট বছর বয়সের সময় তার বাম চোখে চুলকানি হয়েছিল। সেটা বেড়ে গিয়ে চোখ থেকে পানি পড়া শুরু হয়। চিকিৎসা করেও কোন কূল কিনারা হচ্ছিল না তাতে। একসময় চোখটিতে দৃষ্টিশক্তি কমে আসতে থাকে। ২০১৩ সালে ধামরাই সরকারি ডিগ্রি কলেজ থেকে স্নাতক শেষ করে রেশমা মাস্টার্সের জন্য ভর্তি হন মানিকগঞ্জের দেবেন্দ্র কলেজে। এ বছরেই তার বাম চোখের আলো পুরোপুরি নিভে যায়।

পরে ধামরাই উপজেলা হাসপাতালের চিকিৎসক এনামুল কবির রেশমাকে চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন। এরপর ঢাকার সেন্ট্রাল চক্ষু হাসপাতালের চিকিৎসক দীর্ঘদিন চিকিৎসা প্রদানের পর তার চোখে সংক্রমণ রয়েছে বলে জানান এবং যত দ্রুত সম্ভব কর্নিয়া পাল্টানোর কথা বলেন।

কর্নিয়া বদলাতে ২০১৩ সালের দিকে সন্ধানীতে আবেদন করেন রেশমা। সেসময় কর্নিয়া বিশেষজ্ঞ শীষ রহমানের অধীনে চিকিৎসা চলছিল তার।

এরইমধ্যে ২০১৪ সালের ৮ অক্টোবর মারা যান ভাষা সৈনিক আবদুল মতিন। জীবিত থাকতে তিনি নিজের দুই কর্নিয়া দান করে যান। সন্ধানী সেই খবর পেয়ে রেশমাকে যোগাযোগ করতে বলে।

পরে ৯ অক্টোবর বিকেল চারটার দিকে পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে মহান ভাষা সৈনিকে চোখের কর্নিয়া রেশমার চোখে স্থানান্তর করা হয়। এতে তার খরচ হয় মাত্র ১৫ হাজার টাকা। যদিও ওই সময় কর্নিয়া কিনতে দুই লাখ টাকা লাগবে বলে জানিয়েছিলেন চিকিৎসকরা।

ধামরাইয়ের বীর মুক্তিযোদ্ধার কন্যা রেশমা পেশায় সুয়াপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যকর্মী।  ভাষা মতিনের দেয়া চোখের আলোতে মানবসেবায় ব্রত হয়েছেন তিনি। বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষের সেবা করার সঙ্গে সঙ্গে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেন শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গদান করার জন্য। এভাবে মানুষের উপকার করে আবদুল মতিনের ঋণ কিছুটা শোধ করতে চান তিনি।

জানালেন, কর্ণিয়া সংযোজনের পর চোখ খুলে একমাত্র মেয়ে ফেরদৌসী মিমকে দেখতে পেয়েছিলেন রেশমা। এরপর গত ৬ বছর ধরে নিজের স্বাভাবিক কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

রেশমা জানান, কর্নিয়া স্থানান্তরিত ওই চোখ দিয়ে সত্তর শতাংশ দেখতে পান তিনি। আর ১০ ফুট দূরত্ব পর্যন্ত যে কোন ব্যক্তিকে অনায়াসে চিনতে পারেন। শুধু বই পড়তে গেলে চশমা ব্যবহার করতে হয়।

তিনি বলেন, একজন ভাষা সৈনিকের দেয়া চোখে আজ পৃথিবীর আলো দেখতে পেয়ে তিনি গর্বিত। এমন এক মহান ব্যক্তির স্মৃতি ধারণ করতে পেরে তার জীবন সার্থক।

No comments:

Post a Comment

Post Bottom Ad

Pages