প্রায়ই পানিতে পড়ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা
লক্ষ্মীপুরে ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকোতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আতঙ্কিত পারাপার
এস এম বাবুল (বাবর), লক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধিঃ
ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকোতে বাধ্য হয়ে পারাপার হতে গিয়ে আতঙ্কিত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। পা পিছলে প্রায়ই ঘটছে দূর্ঘটনা। কখনো শিক্ষক, আবার কখনোবা শিক্ষার্থীরা পানিতে ভিজে একাকার। সাতার না জানায় অনেক শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও তাদের অভিভাবকরা আতঙ্কগ্রস্ত অবস্থায় রয়েছেন। একটি ব্রীজ বা কাঠের পোলের অভাবে এমনই দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থায় রয়েছেন লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের দক্ষিণ চর লক্ষ্মী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মচারী এবং স্থানীয়রা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জান গেছে, রায়পুর উপজেলার ৮নং দক্ষিণ চরবংশীর দক্ষিণ চর লক্ষ্মী গ্রামে ১৯৯১ সনে প্রায় ৫০শতাংশ ভূমিতে প্রতিষ্ঠিত হয় দক্ষিণ চর লক্ষ্মী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। দ্বিতল ভবনের এ বিদ্যালয়টিতে চলতি বছর শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২শ’ ২৬ জন। শিক্ষক রয়েছেন ৫ জন। এদের মধ্যে ২ জন নারী ও ৩ জন পুরুষ।
সর্বশেষ গত ৫ জানুয়ারি বিদ্যালয় ছুটির পর বাড়ি যাওয়ার পথে পা পিছলে সাঁকো থেকে পানিতে পড়ে যান বিদ্যালয়টির দু’ শিক্ষক মোস্তফা কামাল (৫৩) ও নাজমুন নাহার (৩২)। অপর শিক্ষক মাহবুবুর রহমান ভিজে গেলেও কোনো মতে পড়া থেকে রক্ষা পান। এদের মধ্যে সাঁতার জানেন না নাজমুন নাহার। তাদের চিৎকারে স্থানীয়রা তাদেরকে এসে উদ্ধার করেন। শিক্ষিকা নাজমুন নাহারকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে দ্রুত লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতলে নেওয়া হয়। সেখানকার মেডিকেল অফিসার ডা: জয়নাল আবেদিন তাঁর চিকিৎসা করেন। শিক্ষক মোস্তফা কামাল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা নেন। একইভাবে প্রায় কোমলমতি শিক্ষার্থীরা পানিতে পড়ে ভিজে একাকার হয়ে যায়। শিশুদের মধ্যে সাঁতার না জানাদের মাঝে বিরাজ করে চরম অতঙ্ক।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিদ্যালয় সংলগ্ন এ সিআইপি খালটিতে প্রায় ১৩৫ ফুটের একটি ব্রীজ নির্মাণের জন্য দীর্ঘ অনেক বছর থেকেই বিদ্যালয়ের শিক্ষক, ব্যবস্থাপনা কমিটি ও অভিভাবকরা প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছেন। ইতোমধ্যে ব্রীজ নির্মাণের জন্য লিখিত ও মৌখিকভাবে আবেদন করা হয় স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে।তাঁরা সকলেই বিষয়টি দেখবেন বলে প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত সেই আশ্বাসের দৃশ্যমান কোনো বাস্তবায়ন চোখে পড়েনি। ব্রীজতো দূরের কথা শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর জীবনের ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে সেখানে কেউ একটি কাঠের পোলও নির্মাণ করে দেননি। এমনকি বাঁশের সাঁকোটিও মেরামতে কোনো উদ্যোগ কখনো চোখে দেখেনি কেউ। বিদ্যালয়মুখী কাচা রাস্তাটিতেও কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া চোখে পড়েনি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ আবু বকর ছিদ্দিক ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি সিরাজুল হক বেপারী বলেন, এ সাঁকো ও কাঁচা রাস্তাটিই এখন বিদ্যালয়টির জন্য বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাঁকো পারাপার ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীদের নিয়ে সব সময় আতঙ্কগ্রস্ত অবস্থা বিরাজ করে। বিভিন্ন দপ্তর ও জনপ্রতিনিধিদের নিকট অসংখ্যবার ধর্ণা দিয়েও কোনো আশ্বাসের বাস্তবায়ন না পাওয়ায় সকলেই হতাশ।
রায়পুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার কেএম মোস্তাক আহমেদ বলেন, আমিও তাদের দুর্দশার চিত্রটি বিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে দেখে এসেছি। পানিতে পড়ে দু’শিক্ষক এ যাত্রায় আল্লাহর রহমতে বেঁচে গেলেও তাদেরকে এ আতঙ্ক ও ধকল সহ্য করতে হবে দীর্ঘদিন। উপজেলা চেয়ারম্যান সাহেবের সাথে ব্রীজ নির্মাণের বিষয়ে কথা হয়েছে। আশা করি দ্রুত একটি রেজাল্ট দেখতে পাবো।
রায়পুর উপজেলা প্রকৌশলী মো. হারুনুর রশিদ ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, লিখিত আবেদন ও শিক্ষকদের পানিতে পড়ার বিষয়টি আমরা অবগত রয়েছি। উপজেলা চেয়ারম্যান সাহেবের সাথে আলোচনা করে দ্রুত সেখানে একটি ব্রীজ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।
No comments:
Post a Comment