কলাপাড়া প্রতিনিধিঃ পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলাধীন ডালবুগঞ্জ ইউনিয়নের ৫১নং মেহেরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকটের কারণে দপ্তরি দিয়ে চলছে পাঠদান। এ নিয়ে অভিভাবক মহলে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র ক্ষোভ ও চরম অসন্তোষের।
শিক্ষক না থাকায় লেখাপড়া হয় না বলে অনেক অভিভাবক তাদের ছেলে-মেয়েদের বিদ্যালয়ে পাঠান না। এ কারণে প্রতি বছরই এ বিদ্যালয় থেকে কমছে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা। গত বছরের চেয়ে এ বছর অনেক শিক্ষার্থী কম ভর্তি হয়েছে। ফলে বিদ্যালয়টিতে প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে অনেকাংশে। এতে শিশুদের ভবিষ্যৎ নিয়েও দেখা দিয়েছে সংশয়।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে স্থাপিত এ বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ১৩৮ জন। অনুমোদিত শিক্ষক পদের সংখ্যা প্রধান শিক্ষকসহ ৫ জন। অথচ প্রধান শিক্ষক ব্যতিত অন্য কোনো শিক্ষক নেই। তাই প্রধান শিক্ষক ও দপ্তরিকে দিয়েই চলছে ছয় শ্রেণির পাঠদান। চারজন সহকারী শিক্ষকের মধ্যে দুইজন থাকলেও তাদের একজন (মোঃ আবুল কাশেম) রয়েছেন বিপিএড প্রশিক্ষণে এবং অপরজন (মোসাঃ মরিয়ম আক্তার ডলি) রয়েছেন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে। প্রধান শিক্ষক দাপ্তরিক কাজে উপজেলা সদরে গেলে বা ছুটিতে থাকলে দপ্তরিকেই সামলাতে হয় পুরো স্কুল।
এ ব্যাপারে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিদ্যালয়টিতে শিক্ষক না থাকায় এবং দপ্তরি দিয়ে পাঠদান করানোর কারণে তারা তাদের ছেলে-মেয়েদের ক্লাসে পাঠাতে আগ্রহ হারাচ্ছেন। ফলে বিদ্যালয়টি বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এছাড়া শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা। তারা শিক্ষক সমস্যা নিরসন করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনকে চলমান রাখার দাবি জানান।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মোস্তফা জামাল বলেন, ‘শিক্ষক সংকটের কারণে আমার স্কুলে ক্লাস নিতে খুব সমস্যা হচ্ছে। প্রথম শিফটে একই সঙ্গে চলে শিশু, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ক্লাস এবং দ্বিতীয় শিফটে চলে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস। এ কারণে আমাকে এক শ্রেণি থেকে আরেক শ্রেণিতে ছুটে বেড়াতে হয় সবসময়। এতে হিমশিম খেতে হয়। এজন্য মাঝেমধ্যে বাধ্য হয়েই দপ্তরিকে দিয়েই ক্লাস সামলাতে হয়। বিষয়টি শিক্ষা অফিসকে একাধিকবার জানানো হলেও শিক্ষক সমন্বয়ের মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধানের কোনো ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছেন না কর্তৃপক্ষ।’
বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী সাগরকন্যা কুয়াকাটাকে বলে, ‘শিক্ষক না থাকায় আমাদের নিয়মিত ক্লাস হয় না। হেডস্যার একসঙ্গে ছুটাছুটি করে সব শ্রেণিতে ক্লাস নেন। তাই কোনো ক্লাসই ভালোভাবে হয় না। আর মাঝেমধ্যে দপ্তরি ক্লাস নেন। কিন্তু তিনি আমাদের চাহিদা মত পাঠদান করতে পারেন না। আমাদের লেখাপড়া ঠিকমত চালানোর জন্য আরও শিক্ষক প্রয়োজন। তাই আমাদের স্কুলে শীঘ্রই শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।'
দপ্তরি মোঃ ইসমাইল মোল্লা বলেন, ‘এক সময়ে একাধিক শ্রেণির পাঠদান থাকায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। আর হেডস্যারের একার পাঠদান করতেও কষ্ট হয়। তিনি এক ক্লাস নিতে গেলে অন্য ক্লাস ফাঁকা থাকে। তাই বাধ্য হয়েই আমাকে ক্লাস নিতে হয়।'
বিদ্যালয়ের সভাপতি মোঃ বাবুল গাজী বলেন, ‘কয়েক বছর থেকেই বিদ্যালয়টি শিক্ষক সংকটসহ নানা সমস্যায় ভুগছে। যার প্রভাব পড়ছে শিক্ষার্থীদের ওপর। আমরা একাধিকবার উপজেলা শিক্ষা অফিসে শূন্য পদে শিক্ষক দেওয়ার কথা বলেছি। কিন্তু সেখান থেকে বার বার আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত কাউকেই নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এতে অনেক ছাত্র-ছাত্রীর শিক্ষাজীবন থমকে যাচ্ছে, হচ্ছে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। আমাদের দাবি দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে এসব কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষার আলোয় ফিরিয়ে এনে আলোকিত করা হোক।'
দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া না হলে প্রয়োজনে অভিভাবকদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবেন বলেও জানান তিনি।
No comments:
Post a Comment